অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
আর বছর দেড়েক পর ফের দুয়ারে ভোট! সেই ভোটের আগে আগামী ফেব্রুয়ারিতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ার যাত্রা করার পরিকল্পনা রয়েছে। তারও আগে কর্মসংস্থানের বিষয়টি জোর দিতে এ বার দুয়ারে সরকারের আদলে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে শুরু হচ্ছে ‘শিল্পের সমাধান শিবির’। ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের কারিগর এবং অন্যান্য শিল্পোদ্যোগীদের ওই শিবিরের মাধ্যমে ১২টি পরিষেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কর্মসংস্থানে ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগী হিসাবে মহিলাদের অন্তর্ভুক্তিতে উৎসাহিত করাই এই কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য। এই শিবিরের উদ্যোক্তা রাজ্যের ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি শিল্প ও বস্ত্র দফতর (এমএসএমই অ্যান্ড টি)। ২ ডিসেম্বর থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্য জুড়ে প্রতিটি ব্লক ও পুর এলাকায় শিবির করে ১২ ধরনের পরিষেবা প্রদান করা হবে। ঝাড়গ্রাম জেলার ৮টি ব্লকের পাশাপাশি জেলাশহরের পুর এলাকাতেও ছ'দিনের শিবির হবে। ২-৭ ডিসেম্বর লালগড় ও জামবনি ব্লক অফিসে, ৯-১৪ ডিসেম্বর বেলপাহাড়ি, নয়াগ্রাম, সাঁকরাইল ও গোপীবল্লভপুর-১ ব্লক অফিসে এবং ১৪-২০ ডিসেম্বর (রবিবার বাদে) গোপীবল্লভপুর-২ ও ঝাড়গ্রাম ব্লক অফিসে শিবিরগুলি হবে। এ ছাড়াও ঝাড়গ্রাম শহরের শিবিরও ১৪-২০ ডিসেম্বর ঝাড়গ্রাম ব্লক অফিসে হবে।
চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসটিকে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের মাস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এই কর্মসূচির দু’টি প্রধান উদ্দেশ্য হল: গ্রামীণ ও শহুরে হস্তশিল্প কারিগর ও শিল্পোদ্যোগীদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের তথ্য প্রচার এবং প্রকল্পের সুবিধাগুলি পেতে হাতে-কলমে সহায়তা প্রদান। দ্বিতীয়ত ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া। ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি শিল্প ও বস্ত্র দফতরের বিভিন্ন পরিষেবা ছাড়াও ছোট ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে সংযুক্ত উৎকর্ষ বাংলা দফতর, উচ্চ শিক্ষা দফতর, কৃষি দফতর, সংখ্যালঘু দফতর, অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতর এবং পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরেরও বিভিন্ন প্রকল্প সম্পর্কেও শিবিরে অবহিত করে পরিষেবা দেওয়া হবে। ব্লক স্তরে ও পুর শহরে ছ’দিন পরিষেবা প্রদানের শিবির হবে। ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি শিল্প ও বস্ত্র দফতরের অধীনে যে সব পরিষেবাগুলি দেওয়া হবে সে গুলি হল: সহজে ঋণের জন্য ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড প্রকল্প, স্ব উদ্যোগীদের সরকারি নথিভুক্তিকরণ (উদ্যম রেজিস্ট্রেশন), কারিগরদের জন্য সহায়ক সরঞ্জামের আবেদন, কারিগর এবং বয়নশিল্পীদের মৃত্যুকালীন সুযোগ-সুবিধার জন্য আবেদন। কারিগর ও বয়নশিল্পীদের সরকারি তালিকায় অন্তর্ভুক্তি, খাদি ও বয়নশিল্পীদের সুবিধা প্রকল্প। এ ছাড়াও যাঁদের প্যানকার্ড নেই তাঁদের সরকারি উদ্যোগেই প্যানকার্ড করে দেওয়া হবে।
সরকারি সূত্রের দাবি, বিগত বছরে রাজ্য জুড়ে ৯০ লক্ষ ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প তৈরি হয়েছে। কর্মসংস্থান হয়েছে ১.৪ কোটিরও বেশি। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এই ক্ষেত্রে মহিলা শিল্পোদ্যোগীদের সংখ্যায় দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলা। ঝাড়গ্রাম জেলা শিল্পকেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার তারাপদ সুর বলছেন, ‘‘ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগীদের সরকারি প্রকল্পের সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে এলাকা ভিত্তিক তাঁদের এলাকায় শিবিরের আয়োজন করা হচ্ছে।’’
ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি প্রসূন ষড়ঙ্গী বলছেন, ‘‘কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে রাজ্যের মানবিক মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগে অনেকেই উপকৃত হবেন।’’ ঝাড়গ্রাম জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু বলছেন, ‘‘কর্মসংস্থানের কোনও বিষয় নয়। এ সব ভাতা বিলি-বন্দোবস্তের শিবির।’’