তাঁর শিল্পকলা। বানানো কিছু গাড়ির মডেল। -নিজস্ব চিত্র।
ছোট থেকেই বিদেশি গাড়ির প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন পেশায় চিত্রকর পূর্ব মেদিনীপুর তমলুকের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অনির্বাণ মিশ্র। সেই ভাললাগাই আজ তাঁকে এনে দিল ‘ইন্ডিয়ান বুক অফ রেকর্ডস’-এর স্বীকৃতি। সম্প্রতি কাঠের টুকরো দিয়ে মাত্র ৬ মিলিমিটার আকারের গাড়ির মডেল বানিয়ে এই সম্মান ছিনিয়ে নিয়েছেন তিনি।
তবে এই সাফল্য পাওয়ার জন্য দীর্ঘ চড়াই উতরাই পেরতে হয়েছে অনির্বাণকে। ছোটবেলায় মায়ের কাছে ছবি আঁকার হাতে খড়ি। তারপর ছবি আঁকা এবং শিল্পকর্মেই মনোনিবেশ করেন। ২০১৩ সালে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে কলকাতার একটি আর্ট কলেজ থেকে স্নাতক হন এবং ২০১৯-এ হায়দরাবাদ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করার পর অনির্বাণ এখন একটি বেসরকারি বিএড কলেজে আর্টস-এর শিক্ষক।
অবসর সময়ে ছবি আঁকেন। সেই সঙ্গে নিত্যনতুন শিল্পকর্মে ডুবে থাকেন আন্তর্জাতিক শিল্পী হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখা যুবকটি। ছবির পাশাপাশি অনির্বাণ দীর্ঘদিন ধরে হস্তশিল্পেও পারদর্শী। বাঁশ দিয়ে তৈরি ক্যালিগ্রাফি পেন, হাতে তৈরি প্রাকৃতিক রঙ, কাগজ কেটে তৈরি টাইটানিক জাহাজের মডেলের দৌলতে গত নভেম্বরেই একটি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। তবে বিদেশি গাড়ির প্রতি অসীম আকর্ষণ থেকে প্রায়শই বিএমডব্লিউ, অডি’র মতো নানা গাড়ির মডেল সংগ্রহ করতেন তিনি। এরপরেই গত বছরের নভেম্বরে প্রথম গাড়ির ছোট মডেল বানাতে শুরু করেন।
অনির্বাণ মিশ্র।
প্রথমে ভাঙা রেডিয়োর যন্ত্রাংশ এবং মোবাইলের সিম কার্ডের অংশ দিয়ে ৪ সেন্টিমিটারের গাড়ি তৈরি করেন। তাতে ছোট নাট দিয়ে চাকাও তৈরি করেন। এরপর এমসিল দিয়ে ৩.৫ সেন্টিমিটারের বিএমডব্লিউ-র মডেল। তারপর কাঠ দিয়ে দেড় সেন্টিমিটারের মডেল এবং অবশেষে ডিসেম্বরের প্রথম দিকে কাঠের টুকরো দিয়ে ৬ মিলিমিটার আকারের একটি গাড়ি বানান অনির্বাণ। এখানে চাকার জন্য ব্যবহার করেন পোস্ত দানা!
যদিও এই গাড়ি বানাতে গিয়ে প্রথম দিকে বারবার ভেঙে যায় মডেলটি। তবে হাল ছাড়েননি। অনেক চেষ্টার পর সাফল্য আসে। এর পরেই নিজের শিল্পকর্মকে তুলে ধরার জন্য ‘ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ড’-এ আবেদন জানান। তারপর মডেল তৈরির ভিডিয়ো-সহ যাবতীয় তথ্য পাঠিয়ে দেন সংস্থার দেওয়া লিঙ্ক-এ। যদিও বেশ কয়েকবার নানান কারণে ভিডিয়ো প্রত্যাখ্যাত হয়। অবশেষে ডিসেম্বরের ১৭ তারিখ তাঁর কাছে সুখবরটি আসে।
আনন্দবাজার ডিজিটালকে অনির্বাণ বলেন, ‘‘গত ২ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার আমার হাতে এসে পৌঁছেছে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ড-এর মেডেল, সার্টিফিকেট এবং একটি পেন। আগামী দিনে আন্তর্জাতিক মানের শিল্পী হয়ে ওঠার পাশাপাশি গিনেস বুক অফ রেকর্ডস-এ নাম তোলাই আমার স্বপ্ন।’’
তিনি জানান, "আমার আঁকা ছবি এখন পর্যন্ত ২০টিরও বেশী প্রদর্শনী হয়ে গিয়েছে কলকাতার নানান আর্ট গ্যালারিতে। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার আর্ট গ্যালারিতেও আমার ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। ছবি আঁকার দৌলতে ঝুলিতে এসেছে বেশ কয়েকটি পুরষ্কারও। ২০১৯-এ রবীন্দ্রভারতী আয়োজিত অ্যানুয়াল পেন্টিং-এ বেস্ট এওয়ার্ড পেয়েছি। এবার পছন্দের গাড়ির ক্ষুদ্র মডেল বানিয়ে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ড-এর স্বীকৃতি পেয়ে এমন শিল্পকর্মের কাজে আরও বেশী করে উৎসাহ পাবেন বলেই জানিয়েছেন প্রাণোচ্ছল তরুণটি।