আহত চন্দন দে। নিজস্ব চিত্র
হাঁসুয়ার কোপে তৃণমূল কর্মী জখমের ঘটনায় প্রকাশ্যে এল তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
সোমবার রাতে বেলিয়াবেড়া থানার চোরচিতা গ্রামে ধারাল অস্ত্রের কোপে গুরুতর জখম হন চন্দন দে নামে বছর চৌত্রিশের এক তৃণমূল কর্মী। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই ঘটনায় মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত বেলিয়াবেড়া থানায় কোনও অভিযোগ হয়নি। কেউ গ্রেফতারও হননি।
চন্দনের দাবি, সোমবার রাতে তিনি স্থানীয় মুদি দোকান থেকে কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরছিলেন। তখন মাড়তলা এলাকায় অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি রাজীব কর দলবল নিয়ে তাঁর উপরে হামলা চালায়। গত বছর নভেম্বরের শুরুতেও চন্দনকে লক্ষ্য করে বোমা মারার অভিযোগ উঠেছিল রাজীবের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করলেও গ্রেফতার করেনি পুলিশ। তদন্তকারীরা জানিয়েছিলেন, রাজীব পলাতক। মঙ্গলবার জেলা পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌর বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে।’’
চোরচিতা পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। সেখানে তৃণমূলের ৫ জন ও বিজেপি-র ৩ জন সদস্য রয়েছেন। তৃণমূলের অন্দরের খবর, চন্দন বেলিয়াবেড়া ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি কালীপদ সুর ও রাজীব ব্লক তৃণমূলের বর্তমান সভাপতি টিঙ্কু পাল ও জেলা পরিষদ সদস্য স্বপন পাত্রের অনুগামী। পঞ্চায়েতে তৃণমূলের ৫ সদস্যের মধ্যে প্রধান-সহ চার জনই প্রাক্তন ব্লক সভাপতির অনুগামী। ফলে ওইপঞ্চায়েতটি মূলত কালীপদ গোষ্ঠীরই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রধান চম্পাবতী মাহালি হলেও বকলমে চন্দনই তাঁর কাজকর্ম দেখেন। সম্প্রতি চোরচিতা অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি পদে রদবদল হয়। কালীপদের অনুগামী কিশোরীমোহন বেরাকে সরিয়ে ওই পদে আনা হয়ে রাজীবকে। তারপরে কোন্দল আরও প্রকট হয়েছে।
ব্লক তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি কালীপদের দাবি, ‘‘আগের বার চন্দন জখম হওয়ার পরে অভিযোগ পেয়েও পুলিশ কিছু করেনি। তাই আমরা এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের করিনি।’’ ব্লক তৃণমূলের বর্তমান সভাপতি টিঙ্কু অবশ্য দলীয় কোন্দলের কথা মানেননি। তাঁর দাবি, ‘‘ওই গ্রামে সরস্বতী পুজোর বিসর্জন ঘিরে দু’গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল হয়েছিল। ওই গোলমালে চন্দন জড়িয়ে পড়েন। হামলার ঘটনা নিন্দনীয়। তবে এর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই। পুলিশ তদন্ত করে দোষীদের ধরুক।’’ রাজীবকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী বিরবাহা সরেন বলেন, ‘‘ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। আইন আইনের পথে চলবে।’’