খড়্গপুরের প্রেমবাজারে আপের পোস্টার সাঁটাচ্ছেন আইআইটির গবেষক পড়ুয়া সুধীর সিংহ। নিজস্ব চিত্র।
২০১৪ সাল। দেশজুড়ে গেরুয়া ঝড়। সেই সময়ই খড়্গপুরে প্রচার করেছিল আম আদমি পার্টি। পুরোভাগে ছিলেন খড়্গপুর আইআইটির একদল পড়ুয়া। তবে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হতেই আপের প্রচারে ভাটা পড়ে রেলশহরে। তারপর ২০১৬ থেকে ২০২১— সব নির্বাচনে জিতেছে বিজেপি। খানিক ঝিমিয়েই পড়েছিল আপ। এ বার খড়্গপুর আইআইটিরই প্রাক্তনী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দলকে রেলশহরে চাঙ্গা করতে ফের পথে নামলেন প্রতিষ্ঠানের এক গবেষক পড়ুয়া।
সদস্য সংগ্রহে খড়্গপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার সাঁটাচ্ছেন আপের সদস্যরা। শনিবার থেকে শুরু হওয়া সেই কর্মসূচির নেতৃত্বে রয়েছেন খড়্গপুর আইআইটির মেকানিক্যাল বিভাগের গবেষক ছাত্র সুধীর সিংহ। এই মেকানিক্যাল বিভাগেরই প্রাক্তনী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। বছর আড়াই হল আপের সদস্যপদ নিয়েছেন গাজিয়াবাদের সুধীর। তিনি জানালেন, গত বিধানসভা ভোটেও জেলায় প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে শীর্ষ নেতৃত্বের অনুমোদন মেলেনি।
বছর ঘুরলে পঞ্চায়েত ভোট। তারপর ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচন। এ বার আপের পক্ষ থেকে সংগঠন বাড়ানোর নির্দেশ এসেছে। ইতিমধ্যেই জেলায় দু’দফায় বৈঠক হয়েছে। জেলা সভাপতি হয়েছেন মেদিনীপুরের সৌরভ ঘোষ। তবে খড়্গপুরে এখনও ঝিমিয়ে রয়েছে সংগঠন। আপাতত সুধীর তাকে চাঙ্গা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন জোরকদমে। শুধু খড়্গপুর নয়, জেলার বিভিন্ন এলাকায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী দিতে আপাতত সংগঠন মজবুত করাই আপের মূল লক্ষ্য। সুধীর বলেন, “আমরা মাস দু’য়েক ধরেই জেলায় সদস্য সংগ্রহের কাজ করছিলাম। ভাল সাড়া মিলছে। খড়্গপুরে সংগঠন বাড়াতে এই পোস্টার সাঁটাচ্ছি। আইআইটির অনেকেই সদস্য না হলেও আড়ালে আমাকে সমর্থন করছেন। আগামীদিনে তাঁরাও যুক্ত হবেন। পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী দেব ঠিক করেছি।”
তবে শুধু প্রথম সারির পড়ুয়া নন, জেলা ও শহরের আমজনতাকে সদস্য করতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন আপের নেতা-কর্মীরা। মূলত উন্নয়নের পক্ষে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনও দলকে আক্রমণ না করেই তাঁরা এগোতে চাইছেন। লক্ষ্য শিক্ষা-স্বাস্থ্যের উন্নয়নের সঙ্গে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন। আপ সূত্রে দাবি, মাস দেড়েক আগে মেদিনীপুরে বৈঠকে ১০জন সদস্য ছিলেন। কিন্তু দিন পনেরো আগের বৈঠকে সংখ্যাটা বেড়ে ৪০ হয়েছে।
বিজেপির মতোই একটি নির্দিষ্ট নম্বরে মিসড কল দিয়েই আপের সদস্য হওয়া যায়। জেলা সদর মেদনীপুর ছাড়া ডেবরা, ঘাটাল, দাসপুর, পিংলায় প্রচারের মাধ্যমে সদস্য সংখ্যা বাড়ছে। তবে যে খড়্গপুরে একসময়ে জেলায় সবচেয়ে বেশি আপ সদস্য ছিল, সেখানে এখনও পর্যন্ত সংগঠন নিস্তেজ। ময়দানে নেমেছেন সুধীরের মতো আইআইটির গবেষক ছাত্র।
গত দু’দিনে আইআইটির বাইরে সুধীরের নেতৃত্বে প্রেমবাজার এলাকায় প্রচার চালিয়েছে আপ। সংগঠনের জেলা সভাপতি সৌরভ ঘোষ বলেন, “সত্যি বলতে জেলার কয়েকটি এলাকায় খুব ভাল গতিতে সংগঠন বাড়ছে। তুলনায় খড়্গপুরে আমরা একটু পিছিয়ে ছিলাম। তবে এখন গোটা রাজ্যেই তৃণমূল ও বিজেপির প্রতি মানুষের মোহভঙ্গ হচ্ছে। মানুষ স্বচ্ছ সমাজ চাইছেন। আমরা সেই পথে জেলার সঙ্গে খড়্গপুরেও সংগঠন মজবুত করতে পথে নেমেছি।”