শুভজিতের সঙ্গে গোল্ডি।
‘হম কিসিসে কম নেহি’— নামী-দামি প্রজাতির কুকুরদের সঙ্গে টক্করে ‘দেখিয়ে’ দিচ্ছে নেড়ি।
‘ওবিডিয়েন্স শো’ হোক কিংবা ‘ব্রিড শো’— জার্মান শেফার্ড, গোল্ডেন রিট্রিভারদের মতো কুকুরদের হারিয়ে প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার ছিনিয়ে আনছে গোল্ডি। গোল্ডি আসলে নেড়ি কুকুর। চলতি মাসেই খড়্গপুর এবং ঝাড়গ্রামে ডগ শো আয়োজিত হয়েছিল। খড়্গপুরের ‘ওবিডিয়েন্স শো’-তে প্রথম হয়েছে গোল্ডি, আবার ঝাড়গ্রামের ‘ওবিডিয়েন্স শো’-তেও সে প্রথম। পরে খড়্গপুর ও ঝাড়গ্রামে আয়োজিত ‘ব্রিড শো’-তেও প্রথম হয়েছে গোল্ডি। প্রসঙ্গত, ‘ওবিডিয়েন্স শো’-তে সারমেয়র আনুগত্য দেখা হয় এবং ‘ব্রিড শো’-তে দেখা হয় কুকুরের সৌন্দর্য।
বয়স এক বছর পার করেছে গোল্ডি। এর মধ্যেই সে ঝুলিতে পুরেছে বেশ কিছু পুরস্কার। রাস্তা থেকে গোল্ডিকে কুড়িয়ে এনেছিলেন মেদিনীপুরের শুভজিৎ রায়। গোল্ডিকে নিজের কাছে রাখার জন্য বাড়িও বদলাতে হয়েছে তাঁকে। শুভজিৎ বলছিলেন, ‘‘আগে জুগনুতলায় একটা ভাড়া বাড়িতে থাকতাম। গত বছর ১৫ মার্চ, রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। রাস্তার পাশে একটা নালার মধ্যে আটকে গিয়েছিল কুকুর ছানাটি। চিৎকার করছিল। তখন মাসখানেক বয়স হবে। পরের দিন সকালে ওকে আমি নালা থেকে তুলে বাড়িতে নিয়ে আসি।’’ পশুপ্রেমী ওই যুবক বলছিলেন, ‘‘ওকে এনে রাখার জন্য আমাকে ভাড়া বাড়ি বদলাতে হয়। ভাড়া বাড়ির মালিক বলেছিলেন, কুকুর নিয়ে থাকা যাবে না।’’
কিছুটা বড় হওয়ার পর শুরু হয় গোল্ডির প্রশিক্ষণ। শুভজিতের কথায়, ‘‘অনেক প্রশিক্ষক এলেও, নেড়ি বলে কেউ প্রশিক্ষণ দিতে রাজি হননি। পরে আমার এক বন্ধু ওকে প্রশিক্ষণ দেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘প্রথমে আমিও ইউটিউব দেখে শিখেছি কী ভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হয়। শুরুর সময় সপ্তাহে সাতদিন চারবেলা করেও প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’’ পরিশ্রমের ফল মিলছে। এই মুহূর্তে গোল্ডিকে নিয়ে গর্বের শেষ নেই শুভজিতের। তাঁর কথায়, ‘‘ডগ শো’গুলিতে ওর সঙ্গে যারা প্রতিযোগিতায় ছিল, সেগুলি বিদেশি কুকুর। এক সময়ে গোল্ডিকে নেড়ি কুকুর বলে অনেকে তাচ্ছিল্য করত। এখন আর কেউ করে না।’’
কী খায় গোল্ডি? শুভজিৎ জানাচ্ছেন, সকালে বিস্কুট খায় সে। দুপুরে ভাত, আনাজ, মাংস। বিকেলে ডিম, সঙ্গে থাকে ‘রেডিমেড’ খাবার। রাতে ভাত-মাংস। শুভজিতের কথায়, ‘‘দু’বেলা মোট তিনশো গ্রাম মাংস লাগে গোল্ডির।’’ প্রসঙ্গত, গোল্ডি ছাড়াও শুভজিতের আরও একটি পোষ্য রয়েছে। সেটি জার্মান শেফার্ড। বয়স মাস ছ’য়েক। শুভজিৎ বলছিলেন, ‘‘ডগ শো’তে সাধারণত রমরমা থাকে বিদেশি কুকুরদেরই। দেশি কুকুরদের প্রবেশাধিকার সেখানে তেমন থাকে না। এখন অবশ্য ছবিটা বদলাচ্ছে।’’
ঝাড়গ্রাম, খড়্গপুরের শো থেকে পুরস্কার এসেছে। এ বার গোল্ডির লক্ষ্য কলকাতার ডগ শো। নিজস্ব চিত্র