সাইকেল যাত্রায় হেলমেট, পথের দাবি বোঝাচ্ছেন বৃদ্ধ

বছর তিনেক ধরে কোলাঘাট স্টেশন সংলগ্ন বাজার এবং কোলা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের খড়িচকের বাসিন্দাদের কাছে ‘হেলমেটবাবু’র এমন সাইকেল যাত্রার ছবি পরিচিত হয়ে গিয়েছে। খড়িচকের বাসিন্দা বছর আটষট্টির রবিন ভট্টাচার্য পথ নিরাপত্তা নিয়ে আমজনতাকে সচেতন করতে হেলমেট পরে সাইকেল চালান।

Advertisement

দিগন্ত মান্না

কোলাঘাট শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:০১
Share:

হেলমেটবাবু। নিজস্ব চিত্র

মাথায় হেলমেট। হ্যান্ডেলে তিন তিনটে হর্ন। সেই হর্ন বাজিয়ে সাইকেলে চলেছেন এক বৃদ্ধ।

Advertisement

হেলমেট মাথায় সাইকেল আরোহী বৃদ্ধকে দেখে খানিকটা অবাকই হয়েছিলেন কোলাঘাট স্টেশনে নামা এক যাত্রী। পাশের দোকানে গিয়ে খোঁজ নিয়েছিলেন— লোকটা কে? কেনই বা হেলমেট পরে সাইকেল চালাচ্ছেন! হাসতে হাসতে দোকানদার জবাব দিয়েছিলেন, ‘‘আরে উনি তো আমাদের হেলমেটবাবু!’’

বছর তিনেক ধরে কোলাঘাট স্টেশন সংলগ্ন বাজার এবং কোলা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের খড়িচকের বাসিন্দাদের কাছে ‘হেলমেটবাবু’র এমন সাইকেল যাত্রার ছবি পরিচিত হয়ে গিয়েছে। খড়িচকের বাসিন্দা বছর আটষট্টির রবিন ভট্টাচার্য পথ নিরাপত্তা নিয়ে আমজনতাকে সচেতন করতে হেলমেট পরে সাইকেল চালান। ২০১৬ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ কর্মসূচির সূচনার পর থেকেই দিদির ‘ভক্ত’ রবিন এই প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

Advertisement

কোলাঘাট স্টেশনের কাছে একটি মনোহারি দোকান রয়েছে রবিনের। মমতা যখন বিরোধী নেত্রী তখন থেকেই তিনি তাঁর অন্ধ ভক্ত। সংবাদপত্রে প্রকাশিত বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর বিভিন্ন খবর ও ছবি কেটে যত্ন করে রেখে যেন। সেই ভালবাসা থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর সাধের প্রকল্প ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর প্রচার চালাচ্ছেন রবিন, একেবারে নিজস্ব ঢঙে।

রবিন বলছিলেন, ‘‘আমার বাড়ি থেকে দোকানের দূরত্ব তিন কিলোমিটার। ভোর ৫টায় যখন দোকান যাই, তখন হেলমেট পরে সাইকেল চালাই। দুপুর দেড়টায় বাড়িতে যখন খেতে আসি, তখন হেলমেট মাথায় থাকে। বিকেলে দোকান যাওয়ার পথে এবং রাতেও বাড়ি ফেরার সময়ও আমার সঙ্গী সাইকেল আর হেলমেট।’’

আর তিন রকম হর্নের কী মাহাত্ম্য?

রবিন জানান, একটি সাইকেলের বেল। একটি ভ্যানের হর্ন। আর তৃতীয়টি ব্যাটারি চালিত হর্ন। রবিনের কথায়, ‘‘সাইকেলের বেলে কেউ পথ না ছাড়লে ভ্যানের হর্ন বাজাই। তাতেও না হলে ব্যাটারি হর্ন বাজাই।’’

শুধু সাইকেলে হেলমেট পরে যাতায়াত নয়, পথ নিরাপত্তার জন্য বেশ কয়েকটি ছড়াও লিখেছেন রবিন। সেগুলি দোকানের সামনের রাস্তায় লিখে ঝুলিয়েও রেখেছেন তিনি। কখনও সেই সব ছড়া লেখা কাগজ সাইকেলে সেঁটেও ঘুরে বেড়ান। রবিন জানাচ্ছেন, পথ নিরাপত্তার প্রচারে তাঁর হেলমেট পরে সাইকেল চালানোর বিষয়টি নিয়ে প্রথমে অনেকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করতেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা পাল্টে গিয়েছে প্রশংসায়।

স্থানীয় অসীম দাস বলেন, ‘‘পথ নিরাপত্তা নিয়ে অনেক প্রচার হয়। তবে রবিনবাবুর প্রচার সবচেয়ে আলাদা। তিন বছর ধরে এই প্রচারে ছেদ পড়েনি।’’ হেলমেটবাবুর পাশে রয়েছেন স্ত্রী শ্যামলীও। তিনি বলেন, ‘‘আমার স্বামী শুধুমাত্র পথ নিরাপত্তার প্রচার করেন না, সমাজের যে কোনও জন কল্যাণকর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ওঁর জন্য আমি গর্ব বোধ করি।’’

রবিনের কাজে খুশি পুলিশও। কোলাঘাট হাইওয়ে ট্রাফিকের ওসি প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘রবিনদের মত মানুষ আমাদের কাছে গর্বের। আগামী দিনে ওঁকে সামনে রেখে পথ নিরাপত্তা প্রচার কর্মসূচি করব আমরা।’’

রবিনের অবশ্য এ সবে মন নেই। তিনি বলছেন, ‘‘প্রশংসা পেতে আমার এই সাইকেল যাত্রা নয়। আমাকে দেখে যাতে লোকের হুঁশ ফেরে, সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement