মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত ভোট গণনার কাজ চলল মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডলয়।
বিপুল ব্যালট পেপার বাতিল হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরেও। দেখা যাচ্ছে, কোনও গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে ৮০-১০০টি ব্যালট বাতিল হয়েছে। কোথাও আরও বেশি! এ-ও দেখা যাচ্ছে, যে সংখ্যক ব্যালট বাতিল হয়েছে, সংশ্লিষ্ট আসনে তার চেয়ে কম ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয়েছে। বিরোধীদের নালিশ, ব্যালট বাতিলের ক্ষেত্রেও পক্ষপাত হয়েছে। হাস্যকর অভিযোগ, পাল্টা দাবি শাসক দলের।
অনেক ব্যালটই না কি বাতিল হয়েছে? গণনা পর্বের পরে এক অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, ‘‘কিছু হয়েছে। কোন ক্ষেত্রে ব্যালট বাতিল হবে, সে নিয়ে কমিশনের নির্দিষ্ট নির্দেশিকা ছিল। কমিশনের স্থির করে দেওয়া নির্দেশিকার বাইরে কিছু হয়নি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ওই নির্দেশিকার বাইরে গিয়ে কেউ কিছু করেছেন, এমন কোনও অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। এমন কিছুর প্রমাণও নেই।’’ বিজেপির রাজ্য নেতা তুষার মুখোপাধ্যায়ের নালিশ, ‘‘তৃণমূলের পক্ষে যাওয়া অবৈধ ব্যালট গৃহীত হয়েছে। আবার বিরোধীদের পক্ষে যাওয়া বৈধ ব্যালট বাতিল হয়েছে।’’ তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলেন, ‘‘গণনায় কোন ব্যালট গণ্য হবে, কোনটা হবে না, সেটা কমিশন ঠিক করে। নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। বিরোধীরা হাস্যকর অভিযোগ করছে। আমাদেরও অনেক ব্যালট বাতিল হয়েছে।’’
জানা যাচ্ছে, কমিশনের তরফে জেলাগুলিতে পাঠানো নির্দেশিকায় পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত আইন, ২০০৬ এর কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। জানানো হয়েছিল, প্রত্যেকটি ব্যালট ভালভাবে খতিয়ে দেখতে হবে গণনার সময়ে। যদি কোনও ব্যালটের পিছনের দিকে প্রিসাইডিং অফিসারের সই না থাকে, তাহলে সেটি বৈধ বলে গণ্য হবে না। এই ধরনের ব্যালট বাতিল করতে হবে গণনার সময়ে। প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, পিছনে প্রিসাইডিং অফিসারের সই না থাকায় বেশ কিছু ব্যালট পেপার বাতিল হয়েছে। আবার ভোটার কোথায় ভোট দিতে চেয়েছেন তা সঠিক বোঝা না যাওয়ায় কিছু ব্যালট বাতিল হয়েছে। আঙুলের ছাপ থাকায় কিছু ব্যালট বাতিল হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক শোনাচ্ছেন, ‘‘ব্লকগুলিকে জানানো হয়েছিল, কোনও ভোটার যদি তাঁর নাম- পরিচয় লিখে দিয়ে আসেন ব্যালটে, তাহলে সেই ব্যালটও বাতিল হবে। ’’
পঞ্চায়েত পিছু ব্যালট বাতিলের হার কেমন? একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ছবিটা দেখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারে। কেশপুরের এনায়েতপুর। এনায়েতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে ২১টি আসন। সবগুলিতেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল। তৃণমূল পেয়েছে ১৩টি, বিজেপি ৭টি, সিপিএম ১টি। জানা গিয়েছে, এই গ্রাম পঞ্চায়েতের ২১টি আসনে ভোট দিয়েছিলেন সবমিলিয়ে ১৪,৭২৯ জন। এর মধ্যে ১,০৪৩টি ব্যালট পেপার বাতিল হয়েছে। নানা কারণে। এই পঞ্চায়েতের ২ নম্বর আসনে জিতেছে তৃণমূল। ৪৫টি ভোটের ব্যবধানে। তৃণমূল পেয়েছে ৩৪৫টি ভোট। বিজেপি পেয়েছে ৩০০টি ভোট। এখানে ভোটার ছিলেন ৯৬৩ জন। ভোট দিয়েছেন ৭৬৮ জন। ১০৪টি ভোট বাতিল হয়েছে। ১০ নম্বর আসনে জিতেছে তৃণমূল। ২০টি ভোটের ব্যবধানে। তৃণমূল পেয়েছে ২০৫টি ভোট। বিজেপি পেয়েছে ১৮৫টি ভোট। এখানে ভোটার ছিলেন ৬৯৬ জন। ভোট দিয়েছেন ৫৮৯ জন। সূত্রের খবর, জেলায় পঞ্চায়েতে এমনও আসন রয়েছে, যেখানে ৩০০- রও বেশি ব্যালট বাতিল হয়েছে।