শাসকের গোষ্ঠী সংঘর্ষে জখম ৫

গত বিধানসভা নির্বাচনে দলের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে দু’পক্ষকে এক সারিতে দেখা গিয়েছিল বটে, তবে সম্পর্কে ফাটল বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। ইতিমধ্যে নায়ায়ণগড়ের বিধায়ক প্রদ্যোত ঘোষের সঙ্গে ব্লক সভাপতি মিহিরবাবুর ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। বিধানসভা নির্বাচনে সূর্য অট্ট দলবিরোধী কাজ করেছেন বলে প্রদ্যোতবাবুকে ঘনিষ্ঠ মহলে বলতেও শোনা গিয়েছে। সম্প্রতি সূর্যবাবুও বিধায়কের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। আর এতে দুই শিবিরের দূরত্ব আরও বেড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৭ ০০:৩৬
Share:

এ বার বিধায়কের সামনেই হাতাহাতি বাধল তৃণমূল কর্মীদের। শাসকদলের কোন্দল এ বার বেআব্রু হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ে।

Advertisement

বুধবার রাতে নারায়ণগড়ের হেমচন্দ্র অঞ্চলের বড়মোহনপুর হাইস্কুলে তৃণমূলের কর্মী সম্মেলনের আয়োজন ছিল। রাতে সেই সম্মেলন থেকে ফেরার পথে গাঙুরিয়ায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ভাঙচুর হয় কয়েকটি মোটরসাইকেল। অশান্তির আঁচ পৌঁছয় পাশের আম্বিডাঙর গ্রামে। সেখানেও দুই গোষ্ঠীর এক প্রস্ত মারামারি হয়। জখম ৫ জনকে ভর্তি করানো হয় বেলদা গ্রামীণ হাসপাতালে।

তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মিহির চন্দ ও জেলা কর্মাধ্যক্ষ সূর্য অট্টের গোষ্ঠী বিরোধের জেরেই এই ঘটনা। এই দুই নেতার অনুগামীদের কোন্দল দীর্ঘ দিনের। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহুবার নারায়ণগড়ে এসে দু’পক্ষকে সতর্ক করেছেন। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টায়নি।

Advertisement

গত বিধানসভা নির্বাচনে দলের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে দু’পক্ষকে এক সারিতে দেখা গিয়েছিল বটে, তবে সম্পর্কে ফাটল বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। ইতিমধ্যে নায়ায়ণগড়ের বিধায়ক প্রদ্যোত ঘোষের সঙ্গে ব্লক সভাপতি মিহিরবাবুর ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। বিধানসভা নির্বাচনে সূর্য অট্ট দলবিরোধী কাজ করেছেন বলে প্রদ্যোতবাবুকে ঘনিষ্ঠ মহলে বলতেও শোনা গিয়েছে। সম্প্রতি সূর্যবাবুও বিধায়কের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। আর এতে দুই শিবিরের দূরত্ব আরও বেড়েছে।

সম্প্রতি নারায়ণগড়ের বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের অঞ্চল সম্মেলনে মিহিরবাবু ও প্রদ্যোতবাবু হাজির থাকলেও সূর্যবাবুকে দেখা যায়নি। বরং যুব তৃণমূলের ব্যানারে বিভিন্ন এলাকায় আলাদা ভাবে অঞ্চল সম্মেলন শুরু করেছেন সূর্যবাবু। তাঁর অভিযোগ, প্রদ্যোতবাবু বিধায়ক কমিটি গড়ে দলে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছেন। বুধবার সন্ধ্যায় হেমচন্দ্র অঞ্চলে সম্মেলনের আয়োজন করেছিল মিহির গোষ্ঠী। হাজির ছিলেন বিধায়ক প্রদ্যোতবাবুও।

সম্মেলন শেষ হয় রাতে। তারপর বাড়ি ফেরার সময় মিহির ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে সূর্য অনুগামীদের সংঘর্ষ বাধে। মিহির অনুগামী ৫ জনকে জখম অবস্থায় বেলদা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

সূর্য অনুগামী ২ জনও জখম হয়েছেন বলে অভিযোগ। আমিডাঙরেও মিহির অনুগামীদের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় পুলিশ পিকেট বসেছে।

মিহিরবাবুর অভিযোগ, “সম্মেলন ফেরত নিরস্ত্র কর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছে সিপিএমের কিছু দুষ্কৃতী। এই দুষ্কৃতীরা সূর্য অট্টের মদতেই এ সব করছে। দলের একাংশ জেলা নেতৃত্ব সব জেনেও হস্তক্ষেপ করছেন না।’’ সূর্য অট্টের পাল্টা বক্তব্য, “মিহির চন্দ নাবালক। তাই ১৯৯৮ সাল থেকে যাঁরা দল করছেন, তাঁদের তিনি সিপিএমের দুষ্কৃতী বলছেন। আসলে বিধায়ক প্রদ্যোত ঘোষ নিজের মতো করে বিধায়ক কমিটি গঠন করে দলে বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছেন।”

গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ নারায়ণগড়ের তৃণমূল বিধায়ক প্রদ্যোতবাবু। তিনি বলেন, “বিধায়ক কমিটি বলে কিছু হয় না। মিথ্যা বলে সূর্য অট্ট কর্মীদের বিভ্রান্ত করছেন।” সমস্যা সমাধানে কড়া বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি। তাঁর বক্তব্য, “যারা বিশৃঙ্খলা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement