২৪ ঘন্টার মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া জেলায় বুনো হাতির আক্রমণে পাঁচ জনের মৃত্যুর ঘটনায় অশনি সঙ্কেত দেখছে বন দফতর। ঘটনাস্থল থেকে পায়ের ছাপ দেখে বনকর্মীরা নিশ্চিত, দলমার পালের দলছুট তিনটি হাতির দলের একটি হাতি মানুষ মারছে। পথচারীদের আক্রমণ করার পরে যেভাবে পিষে ও ফালা ফালা করে খুন করছে হাতিটি, তাতে একাংশ বনকর্মীর আশঙ্কা, হাতিটি ‘খুনি’ হয়ে গিয়েছে।
শীর্ষ বনকর্তারা অবশ্য এখনই হাতিটিকে খুনি বলতে রাজি নন। পশ্চিম মেদিনীপুরের এক বনকর্তার বক্তব্য, “হামলার স্থল থেকে হাতির পায়ের ছাপ সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনার স্থলে তিনটি হাতির পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে মাঝারি উচ্চতার একটি হাতির হামলায় রামগড়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে, এ ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত। এখনই হাতিটিকে ‘রোগড’ (খুনি) বলা যাবে না। আরও পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন।”
রাউন্ড সেকশন ও ক্রস সেকশন পদ্ধতিতে পায়ের ছাপ বিশ্লেষণ করে অভিজ্ঞ বনকর্মীরা অনুমান করছেন, ওই তিনটি হাতির মধ্যে হামলাকারী হাতিটি সম্ভবত, মাঝারি উচ্চতার স্ত্রী হাতি। বাকি দু’টির মধ্যে একটি পূর্ণবয়স্ক দাঁতাল পুরুষ হাতি আর একটি শাবক হাতি। প্রতি বছর দলমার পালের পুরুষ হাতিরা দলছুট হয়ে জঙ্গলমহলে থেকে গিয়ে রেসিডেন্ট হয়ে যায়। স্ত্রী হাতি সচরাচর রেসিডেন্ট হয় না। বনকর্মীদের অনুমান, ক্রমাগত গ্রামবাসীর তাড়া খেয়ে দলমার পালটি কয়েক মাস যাবত জেলার বিভিন্ন এলাকায় উপ দলে ভাগ হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছে।
রূপনারায়ণ বন বিভাগের গোয়ালতোড় রেঞ্জ এলাকার দলমার পালের গোটা পনেরো হাতি রয়েছে। তার মধ্যে তিনটি হাতি কয়েকদিন আগে রামগড় বিটের জঙ্গলে চলে আসে। দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে ওই তিনটি হাতি নিঃসঙ্গ ও দিগভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফসল বাঁচাতে গ্রামবাসী তাড়া করলে দাঁতাল ও স্ত্রী হাতিটি শাবকটিকে আগলানোর জন্য প্রতিরোধ করছে। এই প্রতিরোধ মানসিকতার থেকে একা পথচারীকে দেখেও রেয়াত করছে না স্ত্রী হাতিটি। যে কারণে বৃহস্পতিবার সকালে জঙ্গলপথ দিয়ে খেজুর গুড় সংগ্রহ করে ফেরার সময় রামগড়ের দুবরাজপুর গ্রামের শান্তি দুলেকে আছড়ে পিষে ফালা ফালা করে খুন করে স্ত্রী হাতিটি। ওই রাতে রামগড়ের পিচ রাস্তায় সাইকেল আরোহী গৌরাঙ্গ ভুঁইয়াকেও একই ভাবে খুন করে হাতিটি।
গ্রামবাসীর তাড়া খেয়ে ওই তিনটি হাতি বৃহস্পতিবার রাতে বাঁকুড়ায় চলে যায়। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত বাঁকুড়ার সারেঙ্গা ও রাইপুর এলাকায় আরও তিনজনের মৃত্যু হয়। বনকর্মীদের অনুমান, একই হাতি বাঁকুড়াতেও গিয়ে মানুষ খুন করছে। রূপনারায়ণের ডিএফও অর্ণব সেনগুপ্ত বলেন, “বাঁকুড়ায় সংগৃহীত হাতির পায়ের ছাপের সঙ্গে আমাদের এলাকায় হাতির পায়ের ছাপ মিলিয়ে দেখার পরে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।”
অন্যদিকে, খড়্গপুরের ডিএফও অঞ্জন গুহ জানান, শুক্রবার রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের নয়াগ্রাম ব্লকে দলমার পালের ৯০টি হাতি দেউলি সীমানা দিয়ে ওড়িশার দিকে যাওয়ার রুট ধরেছিল। কিন্তু অভিযোগ, ওড়িশা বন দফতর তাদের এলাকায় হাতির পালকে ঢুকতে দেয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওড়িশার হুলাপার্টির লোকেরা নয়াগ্রাম সীমান্তে দলমার পালতে লক্ষ্য করে ছররা গুলিও ছোড়ে। বাধা পেয়ে হাতির পালটি আরও আক্রমাণাত্মক হয়ে নয়াগ্রাম ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রচুর ফসলের ক্ষতি করে।