দিঘার দেবেন্দ্রলাল জগবন্ধু বিদ্যাভবনে দশম শ্রেণির ক্লাসঘর। নিজস্ব চিত্র।
স্কুল খুলল প্রায় এক বছর পরে। আর সেই দিন শুক্রবারই ছিল বামদের হরতাল। হরতাল উপেক্ষা করে এ দিন পূর্ব মেদিনীপুরের স্কুলগুলিতে হাজির হলেন শিক্ষক-শিক্ষিকা-পড়ুয়ারা। তবে সব স্কুলে শিক্ষকদের হাজিরা প্রায় ১০০ শতাংশ থাকলেও পড়ুয়াদের উপস্থিতি ছিল যথেষ্ট কম। অন্যদিকে, ধর্মঘটে শিক্ষকেরা সময়ে স্কুলে আসতে না পারায় হেঁড়িয়া আদর্শ বিদ্যাপীঠ স্কুলে ক্ষোভ দেখা যায়। পড়ুয়াদের একাংশ
রাজ্য সড়ক অবরোধও করে।
জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, এ দিন জেলার ৬৪০টি উচ্চ-মাধ্যমিক হাইস্কুলের সবগুলি খোলা হয়েছে। বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা দফতর। স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের উপস্থিতির হার ছিল গড়ে ৪৬ শতাংশ। তবে জেলার বেশ কিছু হাইস্কুলে ৫০ শতাংশের বেশি পড়ুয়া উপস্থিত হয়েছিল। জেলার ভারপ্রাপ্ত বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সঙ্ঘমিত্র মাকুড় বলেন, ‘‘জেলার সব হাইস্কুলে ক্লাস শুরু হয়েছে। জেলার হাইস্কুলগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের গড় উপস্থিতির হার ছিল ৪৬ শতাংশ। বিদ্যালয় পরিদর্শকেরা বিভিন্ন হাইস্কুলে গিয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন। স্কুল খোলা নিয়ে কোথাও কোনও অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়নি বলেই রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে।’’
নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের স্কুলে যাওয়ার বিষয়ে বেশ কিছু শর্ত আরোপ করেছিল স্কুল শিক্ষা দফতর। সেই মতো আগে থেকেই স্কুলগুলি স্যানিটাইজ় করা হয়েছিল। তবে ৩৩৩ দিন বন্ধ থাকার পরে স্কুল খোলার দিনে বামেদের হরতালে এ দিন স্কুলে যেতে সমস্যার মুখে পড়েন শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী উভয়েই। অনেকে এসেছেন গাড়ি ভাড়া করে। আবার বহু পড়ুয়া স্কুলে এসেছে হেঁটে।
কোলাঘাটের কোলা ইউনিয়ন হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল একশো শতাংশ। পড়ুয়াদের হাজিরা ৬০ শতাংশ। তাপমাত্রা বেশি থাকায় তিন জন পড়ুয়াকে বাড়ি ফিরিয়ে দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। পাঁশকুড়ার ব্রাডলিবার্ট এবং শ্যামসুন্দরপুর পাটনা হাইস্কুলেও এদিন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের হাজিরা ছিল একশো শতাংশ।
কাঁথি শহর এলাকার সমস্ত স্কুলে সরকারি নির্দেশ মেনে শুক্রবার থেকে পঠন-পাঠন শুরু হয়। কাঁথি চন্দ্রমণি ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা স্বপ্না মণ্ডল ঘোড়ই বলেন, ‘‘শিক্ষক শিক্ষিকারা সকলেই উপস্থিত ছিলেন। তবে ছাত্রীদের উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল।’’ একই ছবি কাঁথি হাইস্কুলে। তবে রাস্তায় বাস কম থাকায় রামনগর-২ ব্লকের কালিন্দী ইউনিয়ন হাইস্কুলের নবম শ্রেণির একাধিক ছাত্রী জানাচ্ছে, ট্রেকার না মেলায় তারা তিন কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে গিয়েছে।
মংলামাড়ো মঙ্গলা অ্যাকাডেমিতে পড়ুয়াদের থার্মাল স্ক্রিনিং। নিজস্ব চিত্র।
এগরা ও পটাশপুরের একাধিক এলাকায় স্কুল শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই ছাত্র- ছাত্রীরা স্কুলে পৌঁছে যায়। তবে ধর্মঘটের কারণে শিক্ষকদের আসতে কিছুটা দেরি হয়। হলদিয়া মহাকুমার স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের গড় উপস্থিতির হার ছিল প্রায় ৭০ শতাংশ। সেখানের স্কুলগুলি তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কোভিড সুরক্ষা বিধি সম্পর্কে আগে থেকেই পড়ুয়াদের সচেতন করে।
তমলুক হ্যামিল্টন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মধুসূদন জানা জানাচ্ছেন, নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ৮০০ ছাত্রের মধ্যে ৫২০ জনকে ডাকা হয়েছিল ক্লাস করার জন্য। এদের মধ্যে ৩৮৪ জন ছাত্র উপস্থিত হয়েছিল। আবার তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের ডিমারি হাইস্কুলে এদিন স্কুল খোলার আগে রাজনৈতিক দলের বাধার মুখে পড়তে হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের হস্তক্ষেপে স্কুলের গেট খোলা হয়।