দুমড়েমুচড়ে যাওয়া সেই গাড়ি। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
দিঘায় বেড়াতে যাওয়ার জন্য দলবেঁধে বেরিয়েছিলেন। বাড়ি থেকে গাড়িতে রওনা হয়েছিলেন হুগলির খানাকুলের কিশোরপুর পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূলের ৬ নেতা-কর্মী। কিন্তু বুধবার রাতে তমলুকের রামতারক হাটের কাছে হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে লরির সঙ্গে তাঁদের গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হল ৪ জনের। জখম দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ২ জনকেই কলকাতার হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
রামতারক হাটের কাছে হলদিয়া-মেচেদা জাতীয় সড়কে উঠে এসেছে গ্রামের ভিতরের মোরাম রাস্তা। পুলিশ জানিয়েছে, রাত ২টো নাগাদ ওই সড়ক ধরে যখন দিঘার দিকে যাচ্ছিল গাড়িটি। সেই সময় জাতীয় সড়ক সংলগ্ন ওই মোরাম রাস্তার ধারে মাছের আড়ত থেকে একটি লরি আচমকাই সড়কে উঠে আসে। নিমেষে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের ওই গাড়ি সঙ্গে জোরালো সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় দীপঙ্কর বর (৩৪), প্রসেনজিৎ দিগর (৫৩), রাজু পণ্ডিত (৩২) ও দিলীপ সামন্তর (৫০)। আহত হন শীতল মাজি ও আশিস সানকি। দীপঙ্কর ও রাজুর বাড়ি খানাকুল থানার ময়াল গ্রামে। প্রসেনজিতের বাড়ি ময়াল বন্দিপুর গ্রামে ও দিলীপের বাড়ি বামনখানা গ্রামে। দীপঙ্কর কিশোরপুর অঞ্চল তৃণমূল কার্যকরী সভাপতি। প্রসেনজিৎ অঞ্চল এসসি-এসটি সেলের সভাপতি ছিলেন। রাজু ও দিলীপ তৃণমূল কর্মী। শীতল স্থানীয় তৃণমূল নেতা এবং আশিস পঞ্চায়েতের সুপারভাইজার।
প্রসঙ্গত, একই ভাবে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে দিঘায় বেড়াতে যাওয়ার পথে মুর্শিদাবাদের কান্দির ৬ জনের একটি পর্যটক দল দুর্ঘটনায় পড়ে। মারিশদার শিল্লিবাড়ির কাছে একটি লরির সঙ্গে তাঁদের গাড়ির সংঘর্ষ হয়। ঘটনাস্থলে সকলেই মারা গিয়েছিল। মৃতদের অধিকাংশই ছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলার তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীপঙ্করের স্ত্রী কিশোরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য। দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি দীপঙ্করেরই। ওই গাড়িতে দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে দিঘায় বেড়াতে যাবেন ঠিক করেন দীপঙ্কর। সেইমতো বুধবার রাতে খাওয়াদাওয়ার পরে ১০টা নাগাদ বাড়ি থেকে রওনা হন তাঁরা। গাড়ি চালাছিলেন দীপঙ্করই। রাত ২টো নাগাদ রামতারকহাটের কাছে সোয়াদিঘি খালের পাশের রাস্তা জাতীয় সড়কে উঠে আসা লরির সঙ্গে তাঁদের গাড়ির সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনার পরে লরি ফেলে চালক এবং খালাসি পালিয়ে যায়। প্রচণ্ড সংঘর্ষে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া গাড়ি থেকে পুলিশ ও স্থানীয়রা সকলকে উদ্ধার করে। দেখা যায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত দু’জনকে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা সৌরভ জানা বলেন, ‘‘আমি কাছেই দোকানে ঘুমিয়েছিলাম। প্রচণ্ড শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। গিয়ে দেখি লরির ধাক্কায় একটা গাড়ি ভেঙেচুরে গিয়েছে। গাড়ির মধ্যে ৬ জন রক্তাক্ত অবস্থায় আটকে রয়েছে। পুলিশকে জানাই। পুলিশের সঙ্গে হাত লাগিয়ে আমরা গাড়ি থেকে সবাইকে বের করি।’’
খবর পেয়ে তমলুকে পৌঁছে যান মৃত তৃণমূল নেতা দীপঙ্করের ভাই তথা কিশোরপুর পঞ্চায়েতের প্রধান সন্দীপ বর। তিনি বলেন, ‘‘দিঘা যাওয়ার জন্য দাদা দলের কয়েকজনকে নিয়ে রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। রাত আড়াইটা নাগাদ পুলিশের কাছ থেকে খবর পাই তমলুকের কাছে দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’ জেলা পুলিশ সুপার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দুর্ঘটনায় গাড়ির চার আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। দু’ জন জখম। লরির চালককে ধরতে তল্লাশি চলছে।’’