মহিষাদলের রমণীমোহন পঞ্চায়েতে দুয়ারে ত্রাণের শিবির। নিজস্ব চিত্র।
ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, কৃষি-উদ্যানপালন, মৎস্য, কুটিরশিল্পের জন্য সরকারি আর্থিক সাহায্য দিতে ‘দুয়ারে ত্রাণ’ কর্মসূচির আবেদন জমা শুরু হল বৃহস্পতিবার। জেলার ১৩টি ব্লক এবং তিনটি পুরসভার মধ্যে এদিন ১০টি ব্লক ও একটি পুরসভার বাসিন্দাদের আবেদন জমা নেওয়ার জন্য শিবির হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম দিন ৩৬০০ আবেদন জমা পড়েছে।
জেলা প্রশাসন ও বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা দফতর সূত্রে খবর, ইয়াসের জেরে জলোচ্ছাসে ঘরবাড়ি, আনাজ চাষ, পান বরজ, বাদাম, তিল, মুগ চাষ, মাছের ভেড়ি-পুকুর, প্রাণিসম্পদ ও ক্ষুদ্র-কুটিরশিল্পের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণ সহ অন্য ক্ষতির জন্য আর্থিক সাহায্য দিতে ‘দুয়ারে ত্রাণ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তর প্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের কাছ থেকে ৩ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত আবেদন জমা নেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দার যাতে বাড়ির কাছাকাছি এলাকায় আবেদন জমা করতে পারকেন সে জন্য শিবির আয়োজনের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। তবে আমপান থেকে শিক্ষা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা নিয়ে দুর্নীতি রুখতে এবার প্রথম থেকে কড়া পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সরকার ও জেলাপ্রশাসন। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরাই যাতে সরকারি সাহায্য পান সেজন্য আবেদন জমার আগেই জেলা প্রশাসনের তরফে সমস্ত ব্লক ও পুরএলাকায় সমীক্ষা করে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলার ২৫টি ব্লকের মধ্যে শহিদ মাতঙ্গিনী, মহিষাদল, নন্দকুমার, চণ্ডীপুর, নন্দীগ্রাম-১ ও ২, খেজুরি-১ ও ২, কাঁথি-১, দেশপ্রাণ(কাঁথি-২), কাঁথি-৩, রামনগর-১ ও ২ মোট ১৩টি ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। একইভাবে জেলার পাঁচ পুরসভার মধ্যে তমলুক, হলদিয়া ও কাঁথি এই তিন পুরসভার কয়েকটি ওয়ার্ড এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার আবেদন জমার প্রথম দিনে চণ্ডীপুর, খেজুরি-২, কাঁথি-১, দেশপ্রাণ, কাঁথি-৩, রামনগর-১ ও ২, শহিদ মাতঙ্গিনী, মহিষাদল ও নন্দকুমার এই ১০ টি ব্লক এবং কাথি পুরসভা মিলিয়ে ১১টি শিবির হয়েছে। এদিন শিবির পরিদর্শনে গিয়েছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (ট্রেজারি) আশিস সাহা-সহ ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা। প্রশাসন সূত্রের খবর, মহিষাদল ব্লকে শিবিরে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির জন্য ৬২ টি, মৎস্যচাষের জন্য ২টি ও প্রাণিসম্পদের জন্য ১ টি মিলিয়ে মোট ৬৫টি আবেদন জমা পড়েছে। কৃষি-উদ্যানপালন, কুটিরশিল্পের জন্য এদিন কোনও আবেদন জমা পড়েনি।
তবে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের বল্লুক-১ পঞ্চায়েত এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত না হলেও ওই এলাকার বেশকিছু বাসিন্দা এদিন পঞ্চায়েত অফিসে আবেদন জমা দিতে এলে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পঞ্চায়েত প্রধান শরৎ মেট্যা বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মধ্যে না থাকায় আমরা আগেই নোটিস দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলাম ‘দুয়ারে ত্রাণ’-এ আবেদন জমা নেওয়া হবে না। তা সত্ত্বেও কেউ কেউ আসায় তাঁদের বুঝিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে।’’