মনের শেকল ভাঙতে নাটক গড়ার খেলা

ওদের অনেকেরই কৈশোর আর পাঁচজন সহপাঠীর মতো নয়। কারও মা পরিচারিকার কাজ করেন। কারও বাবা রিক্সা চালান। অভাব আর পারিবারিক নানা সমস্যায় ভারাক্রান্ত ওদের কচি মন। হরেক ‘না’-এর শেকল দিয়ে বাঁধা ওদের কৈশোর। স্কুলের পড়াশোনায় ওরা পিছিয়ে যায়। কেউ ভীষণই লাজুক।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ২৩:৩৭
Share:

চলছে নাটক। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

ওদের অনেকেরই কৈশোর আর পাঁচজন সহপাঠীর মতো নয়। কারও মা পরিচারিকার কাজ করেন। কারও বাবা রিক্সা চালান। অভাব আর পারিবারিক নানা সমস্যায় ভারাক্রান্ত ওদের কচি মন। হরেক ‘না’-এর শেকল দিয়ে বাঁধা ওদের কৈশোর। স্কুলের পড়াশোনায় ওরা পিছিয়ে যায়। কেউ ভীষণই লাজুক। কেউ আবার অবাধ্য-ডানপিটে। কেউ কথা বলার সময় তোতলায়, কারও মনসংযোগের ভীষণ রকম সমস্যা রয়েছে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের এমনই ৩৬ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে তিনদিনের কর্মশালা হল ঝাড়গ্রাম নেতাজি আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে।

Advertisement

‘আমরাও পারি-১’ শীর্ষক ওই কর্মশালার আয়োজনে ছিল অরণ্যশহরের ‘কুরকুট’ নাটকের দল। কুরকুটের আমন্ত্রণে হালিশহর থেকে পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য এসেছিলেন নাট্যকর্মী অমিতাভ সাহা। সহ-প্রশিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন কুরকুটের উপল পাহাড়ি, শ্যামল পাল, সুশান্ত দে, তাপস নন্দীরা। ছাত্রছাত্রীদের সমবেত শারীরিক ও মানসিক নানা চর্চার মাধ্যমে তিনি দিন ধরে শেখানো হল মনঃসংযোগ ও ভাল থাকার বিভিন্ন কৌশল।

শনিবার ছিল কর্মশালার শেষ দিন। বাস্তব জীবনের নানা অসম্পূর্ণতা ভুলে গিয়ে স্কুল পড়ুয়া সঞ্জীব, সন্দীপ, সেলিমা, লক্ষ্মীরানি, উত্তম, শুভদীপরা মেতে উঠল নাটক গড়ার খেলায়। তিনটি দলে ভাগ করে পড়ুয়ারা মুখে মুখে ছোট ছোট নাটকের গল্প তৈরি করল। শ্রেণিকক্ষের উল্টোনো বেঞ্চকে পুকুর পাড় বানিয়ে কেউ মাছ ধরতে বসল। কেউ সাজল নৌকো। একদল পড়ুয়া খেলার মাঠ দখল করে বহুতল তৈরির বাস্তব ঘটনা অভিনয় করে দেখাল। আর এক দল রাজামশাইয়ের আংটি হারানো নিয়ে আধুনিক রূপকথার গল্প তৈরি করল। সবশেষে ছোট ছোট নাটকগুলি জুড়ে তৈরি হল এক পূর্ণাঙ্গ নাটক। এ জন্য নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিল কিশোর-কিশোরী অভিনেতারা।

Advertisement

রূপকথা আর বাস্তব মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল স্কুলের তিন তলার শ্রেণিকক্ষে। চূড়ান্ত নাটকে রাজা মশাইয়ের আংটি চুরির কিনারা করে ফেলে পুলিশ। কিন্তু মানুষের ঘরের চুরির কিনারা হয় না। স্কুলের মাঠ দখল রুখতে কেউই এগিয়ে আসে না। পড়ুয়াদের প্রতিবাদে পিছু হটে প্রোমোটার। স্কুলের ডানপিটে দশম শ্রেণির সন্দীপ আর সঞ্জীবের নির্দেশনায় চূড়ান্ত নাটকের শেষে পড়ুয়াদের সমবেত উপলব্ধি, ‘জীবনে যত বাধা আসুক। এগিয়ে যাব।’

নাটক দেখে আপ্লুত স্কুলের প্রধান শিক্ষক অপর্ণেশ মিশ্রর চোখের কোণ চিকচিক করে ওঠে। অপর্ণেশবাবু বললেন, “অমনোযোগী, দুষ্টু কিংবা মুখচোরা তকমা ঘুচিয়ে দিয়ে ওরা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement