প্রতীকী ছবি।
আবেদনের সময় গরহাজির আবেদনকারী। ফলে পূর্ব মেদিনীপুরে ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পে প্রায় ৩০ হাজার আবেদন ফেরত পাঠাল দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা। ওই আবেদনপত্রগুলি ফের গ্রাহ্য করাতে আবেদনকারীকে এ বার সশরীরে হাজির থাকতে হবে। ডিসেম্বর মাস জুড়ে চলবে ওই আবেদনপত্র সংশোধনের কাজ। তখনও আবেদনকারী নিজে হাজির না হলে তাঁর আবেদনপত্র বাতিল হতে পারে বলে খবর কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে গত বছর গোড়ার দিকে রাজ্য সরকার চালু করে ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্প। প্রকল্পে নাম লেখাতে কৃষকের ন্যূনতম ২ ডেসিমাল জলজমি থাকা আবশ্যিক। প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকেরা বছরে ১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সরকারি অনুদান পেয়ে থাকেন। প্রকল্পের আওতায় থাকা কৃষকের কোনওভাবে মৃত্যু হলে তার পরিবার দু’লক্ষ টাকা পর্যন্ত সরকারি সাহায্য পেয়ে থাকেনলো।
লোকসভা ভোটের আগে থেকে জেলার বিভিন্ন ব্লকে দফায় দফায় শিবির করে প্রকল্পের জন্য আবেদন নেওয়া হয় কৃষকদের কাছ থেকে। আবেদনের সময় আবেদনকারীর ভোটের সচিত্র পরিচয়পত্র, চাষযোগ্য জমির সাম্প্রতিক রেকর্ড বা পর্চা, ব্যাঙ্কের সেভিংস পাস বই অথবা কিসান ক্রেডিট কার্ডের পাস বইয়ের প্রথম পাতার জেরক্স, মোবাইল নম্বর জানিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে। আবেদনের সময় আবেদনকারীকে সশরীরে শিবিরে উপস্থিত হতে বলা হয়েছিল কৃষি দফতরের বিজ্ঞপ্তিতে। কিন্তু বেশ কিছু আবেদনকারী নিজে উপস্থিত না থেকে নিজের ছবি আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দেন। কিন্তু ওই প্রক্রিয়া চালুর আগেই বেশ কিছু আবেদনকারী প্রকল্পের এক দফা টাকা পেয়ে গিয়েছেন।
সম্প্রতি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা সংস্থা নতুন সফটওয়্যার নিয়ে আসায় সেখানে জেলার প্রায় তিরিশ হাজার আবেদনপত্র ত্রুটিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। যেগুলি ব্লক কৃষি অফিসগুলিতে ফেরত গিয়েছে সংশোধনের জন্য।
কিন্তু ত্রুটি কোথায়? কৃষি দফতরের এক আধিকারিক জানান, যে কোন সরকারি সাহায্যের জন্য আবেদনকারীকে স্বয়ং হাজির হয়ে ছবি তুলতে হয়। যেসমস্ত আবেদনকারী ওই নিয়ম মেনে চলেননি, নতুন সফটওয়্যারে তাঁদের আবেদন ত্রুটিপূর্ণ বলে চিহ্নিত হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, আবেদনের সময় কি কর্তব্যরত আধিকারিকরা এটা খেয়াল করেননি? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি দফতরের এক কর্তার দাবি, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই শাসক দলের নেতারা প্রভাব খাটিয়ে আপত্তি না শুনে গুচ্ছ গুচ্ছ আবেদনপত্র একসঙ্গে জমা দিয়েছেন শিবিরগুলিতে। ফলে দেখা দিয়েছে বিপত্তি। দেখা গিয়েছে অনেক আবেদনকারী হয়তো ভিন রাজ্যে থাকেন কাজের সূত্রে।’’
কোলাঘাটের এক কৃষকের কথায়, ‘‘স্থানীয় শাসক দলের নেতারা নিজেরাই আবেদনপত্র পূরণ করে জমা করে দিয়েছিলেন। তাই শিবিরে যাইনি। এখন শুনছি আবেদনপত্র ফিরে এসেছে। এটা না করে নিজে গিয়ে করলেই ভাল হত।’’
কৃষি দফতর সূত্রে খবর পাঁশকুড়া ব্লকে প্রায় ২৭০০ আবেদন ত্রুটিপূর্ণ হিসেবে ফিরে এসেছে। পাঁশকুড়ার এক আবেদনকারী বলেন,‘‘কাজের জন্য বাইরে থাকি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কথায় বাড়ির লোকজন আমার ছবি আবেদনপত্রে সঙ্গে জমা দিয়েছিল। এখন শুনছি আবেদনপত্র ফিরে এসেছে। নতুন করে ফের আবেদন করা যাবে শুনছি। এবার নিজেই হাজির থাকব।’’
শুধু কোলাঘাট নয়, জেলার বিভিন্ন ব্লকে ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পে আবেদন জমার ক্ষেত্রে শাসক দলের নেতাদের ‘নাক গলানো’র অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘আমি আগেই জেলাশাসককে এই নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। তৃণমূল নেতারা ফর্মের নিয়ম না জেনে কাটমানি নেওয়ার জন্য এসব করেছেন। ফলে ভুগতে হচ্ছে আবেদনকারীদের।’’ তৃণমূলের পাঁশকুড়া ব্লক সভাপতি দীপ্তি জানার অবশ্য দাবি, ‘‘আমাদের দলের নেতাদের হাতে এত সময় নেই। চাষিরা না জেনেই এই ভুল করেছেন।’’
জেলা কৃষি দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর আশিস বেরা বলেন, ‘‘এটা আতঙ্কিত হওয়ার কোনও বিষয় নয়। আবেদনপত্রগুলি খতিয়ে দেখার কাজ দ্রুত শুরু হবে। আবেদনকারীদের বলব নিজেরা হাজির থেকে ছবি তুলে আবেদন করুন। সঙ্গে সমস্ত নথি যথাযথভাবে জমা দিন। তা হলে আবেদন বাতিলের কোনও সম্ভাবনা থাকবে না।’’