বিরোধীদের ঘর ভাঙছে খড়্গপুরে। কংগ্রেসের পরে এ বার সিপিএমেরও। তিন সিপিএম কাউন্সিলরের একজন ইতিমধ্যে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বুধবার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাম কাউন্সিলর সরিতা ঝা দলবদল করায় ৩৫ সদস্যের খড়্গপুর পুরসভায় তৃণমূলের কাউন্সিলর বেড়ে হয়েছে ২৪। বিরোধীদের মত, পুরসভাকে বিরোধী শূন্য করতে গিয়ে তৃণমূল আসলে নিজের বিপদ ডেকে আনছে।
বুধবার রাতেই ইন্দায় জেলার বিভিন্ন পুরসভার কাউন্সিলরদের নিয়ে তৃণমূলের বৈঠকে হাজির ছিলেন সিপিএমের প্রতীকে জেতা সরিতা। তারপরই তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি জানান, সরিতার দলবদলের কথা। গত ২১ জুলাই কলকাতায় তৃণমূলে যোগ দেন খড়্গপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে-সহ পাঁচ কংগ্রেস কাউন্সিলর। তখনই তৃণমূল হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, আরও অনেক কাউন্সিলর শাসক দলে আসবেন। তখন সরিতা-সহ তিন সিপিএম ও এক সিপিআই কাউন্সিলরকে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে বামেরা জানিয়েছিল, তাদের কাউন্সিলরা কোথাও যাচ্ছেন না। তবে ভাঙন আটকানো যায়নি। তৃণমূলের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার এ দিনও বলেন, “আগামী দিনে আরও কিছু কাউন্সিলর আমাদের দলে আসবেন।’’
নিমপুরার যে ১২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সরিতা জিতেছিলেন, তা বরাবর সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি। দীর্ঘ দিন এখানে কাউন্সিলর ছিলেন দলের জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডল। ফলে, এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দলত্যাগে বিড়ম্বনায় সিপিএম। জোনাল সম্পাদক অনিতবরণবাবু বলছেন, “প্রলোভনেই দল ছেড়েছেন সরিতা ঝাঁ।’’ যদিও সরিতার যুক্তি, “ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র হয়ে কাজ করতে পারছিলাম না। মানুষের দাবি মেনে উন্নয়নের স্বার্থে তৃণমূলে গিয়েছি।’’
জেলা রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা অবশ্য মনে করছেন, পুরসভাকে বিরোধী শূন্য করার এই খেলা তৃণমূলের বুমেরাং হবে। কারণ, ২৪ জন তৃণমূল কাউন্সিলরের মধ্যে ভোটে ঘাসফুলের প্রতীকে জিতে ছিলেন ১১জন। বাকি ১৩জনই অন্য দল থেকে এসেছেন। সিপিএম নেতা অনিতবরণবাবুর মতে, “তৃণমূলে এখন অন্য দলের প্রতীকে জয়ী কাউন্সিলর বেশি। তার উপর ওদের যা গোষ্ঠী কোন্দল তাতে আগামী দিনে তৃণমূলের বোর্ড ভাঙার সম্ভাবনা প্রবল।’’ একই সুরে বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওদের নিজেদের প্রতীকে জয়ী কাউন্সিলর সংখ্যা কম হওয়ায় পরিস্থিতি বুমেরাং হবে।’’ কংগ্রেসের শহর সভাপতি অমল দাসের ব্যাখ্যা, “কাউন্সিলর দল বদল করলে ভোটারের মানসিকতা বদলায় না। গত বিধানসভা ভোটে আমরা দেখেছি, যে সব ওয়ার্ডের বিজেপির কাউন্সিলরের দলবদল করেছিলেন, সেখানে বিজেপি-ই বেশি ভোট পেয়েছে।’’
কাউন্সিলরদের দলবদলে না-খুশ ভোটাররাও। তাঁদের মতে, এতে নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তা ছাড়া, পুরসভার নিয়ম অনুযায়ী সব ওয়ার্ডে সমভাবে টাকা বরাদ্দ হওয়ার কথা। ফলে, কাজের মানসিকতা থাকলে দল বদলের প্রয়োজন নেই। সরিতার ওয়ার্ডের বাসিন্দা এস সুধাকর রাও বলেন, “আমরা সিপিএমের প্রতীকে সরিতা ঝা-কে জয়ী করেছিলাম। ওয়ার্ডবাসীর পরামর্শ না নিয়ে উনি দলবদল করলেন। ওঁর পদত্যাগ করা উচিত ছিল।’’
পুরবোর্ড গঠনের সময়ে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে এসে পুর-পারিষদ হয়েছেন ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বেলারানি অধিকারী। তিনিও মনে করেন, পুরসভা বিরোধী শূন্য হওয়া ঠিক নয়। তাঁর দলবদলেও অখুশি ওয়ার্ডবাসী। ওই ওয়ার্ডের অবসরপ্রাপ্ত পোস্টমাস্টার বীরেন মাইতির কথায়, “বিশ্বাস করে ভোট দিয়েছিলাম। কিন্তু ওয়ার্ডবাসীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে কাউন্সিলর দলবদল করে আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।’’