হেলমেট ছাড়াই সমাবেশের পথে। তমলুকে। নিজস্ব চিত্র।
বছর দু’য়েক আগে ২০১৯ সালে শেষবার যখন প্রকাশ্যে দলের শহিদ সমাবেশ হয়েছিল, তখনও তিনি ছিলেন তৃণমূলের মন্ত্রী। ধর্মতলার সভা মঞ্চে হাজির ছিলেন। তার পরের বছর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সেই ‘মন্ত্রী’ শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি বিধায়ক। কিন্তু তাঁর ‘গড়’ কাঁথি শহর থেকেই বৃহস্পতিবার যে সংখ্যায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা ২১ জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশে হাজির হতে কলকাতায় গিয়েছেন, তা নিয়ে রীতিমতো ‘গর্বিত’ শহর নেতৃত্ব।
শুভেন্দু কাঁথি শহরের ‘শান্তিকুঞ্জে’র বাসিন্দা। তাঁর বাবা তথা সাংসদ শিশির অধিকারী এবং পরিবারে আরও তিন সদস্য রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ভাবে জড়িত। দলবদলের আগে পর্যন্ত তাই কাঁথি শহর ‘অধিকারী গড়’ হিসাবে রাজনৈতিক মহলে পরিচিত। যে কোনও নির্বাচন বা রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে এই শহরের দিকে বরাবরই আলাদা নজর থাকে তৃণমূলের। তাই করোনা কালের পরে এবার যখন ফের তৃণমূলের প্রকাশ্য শহিদ সমাবেশ হচ্ছে, তখন এই শহর থেকে বিপুল সংখ্যক সমর্থক কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার সমস্ত প্রস্তুতি করেছেন শহর এবং সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্ব।
কাঁথি শহর তৃণমূল সূত্রের খবর, শহরের ২১টি ওয়ার্ড থেকে হাজার দুয়েক-তিনেক তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক ধর্মতলার শহিদ সমাবেশে এ দিন গিয়েছিলেন। শুধু শহর থেকেই ২৫টি বাস কলকাতায় গিয়েছিল। এছাড়া, ছোট গাড়ি এবং লোকাল ট্রেনে চেপেও অনেকে সমাবেশে গিয়েছেন বলে তৃণমূলের দাবি। কাঁথি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা কাঁথি সাংগঠনিক জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি বলেন, ‘‘কাঁথি আর অধিকারীদের গড় নয়। কাঁথির আমজনতা দিদির সঙ্গেই। এবার শহিদ দিবসে যেভাবে শহরবাসী কলকাতার সমাবেশে যোগ দিয়েছেন, তা দেখে এটা স্পষ্ট যে, তাঁদের ওই উচ্ছ্বাস আর আবেগ স্বতঃস্ফূর্ত।’’ কাঁথি শহর থেকে যখন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা এ দিন কলকাতায় গিয়েছে, তখন দলীয় সাংসদ তথা অধিকারী বাড়ির সেজো ছেলে দিব্যেন্দু অধিকারীকে সেই সভায় দেখায় যায়নি। এ প্রসঙ্গে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে ফোন করা হলেও তিনি কোনও মন্তব্যকরতে চাননি।
কাঁথি তৃণমূল সূত্রের খবর, বুধবার রাত থেকেই কাঁথি শহর এবং সাংগঠনিক জেলা থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে বাস ছেড়েছে। রামনগরের শঙ্করপুর এলাকা থেকে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাস ছাড়ে রাত ৮টা নাগাদ। তাতে তৃণমূল কর্মীরা ধর্মতলায় যান। কাঁথি শহরের ১, ২, ১৯, ১৪, ১২ নম্বর ওয়ার্ড থেকেও রাতে ধীরে ধীরে বাস ছাড়তে শুরু করে। বুধবার রাত থেকে দলের কর্মী ও সমর্থকদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কোথাও কোথাও রাতে পরোটা-মাংসের প্যাকেট, আবার কোথাও মাংস-ভাত খাওয়ানো হয়েছে। রাতেই খেজুরি, উত্তর কাঁথি বিধানসভায় এলাকা থেকেও একের পর এক বাস ছাড়ে।
তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তরুণ মাইতি বলেন, ‘‘তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা থেকেই ২৪২টি বাস গিয়েছে ধর্মতলায়। সভা শেষে তাঁরা বাড়িও ফিরে এসেছেন। কোথাও কোনও অসুবিধা হয়নি।’’ তৃণমূলের সমাবেশে কাঁথি থেকে বিপুল কর্মী-সমর্থক যাওয়ার দাবি প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা সভাপতি সুদাম পণ্ডিত অবশ্য বলেন, ‘‘সরকারি প্রকল্প এবং সুযোগ-সুবিধা থেকে নাম কেটে দেওয়া হবে বলে ভয় দেখিয়ে লোকেদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নগদ টাকা এবং ভুরিভোজের প্রলোভন দেখিয়ে তৃণমূল শহিদ দিবসের কর্মসূচিতে লোক নিয়ে গিয়েছিল।’’