ধৃত মহেন্দ্র মিত্তল (সামনে) ও ডাক্তার সরেন। সোমবার ঝাড়গ্রাম আদালতে। নিজস্ব চিত্র।
জামবনির খাটখুরা এলাকায় যুবককে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দু’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতেরা হল বছর আটচল্লিশের মহেন্দ্র মিত্তল ও বছর পঁয়ত্রিশের ডাক্তার সরেন।
মহেন্দ্র ঝাড়গ্রাম শহরের জামদার বাসিন্দা। ডাক্তারের বাড়ি ঝাড়গ্রাম থানার জমিদারডাঙা গ্রামে। জামবনি ব্লকের দুবড়া অঞ্চলের খাটখুরার মহুয়াচক থেকে ঝাড়াগেড়িয়া পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির কাজের বরাতপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার ম্যানেজার হল মহেন্দ্র। ডাক্তার ওই কাজের ‘সাইট ম্যানেজার’। রবিবার রাতে বাড়ি থেকেই দু’জনকে গ্রেফতার করে জামবনি থানার পুলিশ। ২২ জুন বন্ধুর সঙ্গে স্কুটিতে খাটখুরা বেড়াতে গিয়ে স্থানীয়দের রোষের মুখে পড়েন ঝাড়গ্রাম শহরের বাসিন্দা বছর তেইশের সৌরভ সাউ। সেখানে রাস্তার কাজের নির্মাণ সামগ্রী চুরির অভিযোগে সৌরভ ও তাঁর বন্ধু অক্ষয় মাহাতোকে মারধর করা হয়। পুলিশ দু’জনকে উদ্ধার করে। দুই যুবককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রবিবার সকালে সৌরভের মৃত্যু হয়। অক্ষয় এখনও চিকিৎসাধীন। সৌরভ চিকিৎসাধীন থাকাকালীন ২৭ জুন তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে জামবনি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। তবে অভিযোগপত্রে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা মারধর করেছে বলে উল্লেখ করা হয়। পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে মারধর ও খুনের চেষ্টার ধারায় মামলা রুজু করেছিল।
ধৃত মহেন্দ্র ও ডাক্তারকে সোমবার ঝাড়গ্রাম সিজেএম আদালতে তোলা হয়। মারধর ও খুনের চেষ্টার ধারায় রুজু মামলাটিতে খুনের ধারা যুক্ত করার পুলিশি আবেদন এ দিন মঞ্জুর করে আদালত। সরকারি আইনজীবী অনিল মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই ঘটনায় সঙ্গে যুক্ত বাকিদের সম্পর্কে তথ্য জানার পাশাপাশি, মারধর ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের জন্য, প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের স্বার্থে ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জেরা করা প্রয়োজন বলে আদালতকে জানানো হয়। দুই অভিযুক্তকে ১০ দিনের জন্য হেফাজতে চাওয়া হয়েছিল। অভিযুক্তদের ৭দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।’’ জেলা পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিনহা বলছেন, ‘‘দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও কারা ঘটনায় জড়িত সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে তাদেরও ধরা হবে।’’
এ দিন আদালত থেকে বেরিয়ে পুলিশের গাড়িতে ওঠার সময় মহেন্দ্র ও ডাক্তার একযোগে দাবি করে, ‘‘ঘটনার সময় আমরা সেখানে ছিলাম না। মারধরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আমরাই পুলিশকে খবর দিই। আমরা মারধর করিনি। অথচ আমাদেরই গ্রেফতার করা হয়েছে।’’
এ দিন আদালতে এসেছিলেন মৃত সৌরভের পরিজনেরা। আদালত চত্বরে সৌরভের মা প্রতিমা সাউ বলেন, ‘‘যারা আমার ছেলেকে এ ভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলল সেই দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই। মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সৌরভকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে।’’২০১৯-এ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাশ করানো হয়েছিল গণপিটুনি বিল ‘ওয়েস্টবেঙ্গল প্রিভেনশন অফ লিঞ্চিং বিল ২০১৯’। তবে তা এখনও আইনে পরিণত হয়নি। ওই বিলে অভিযোগ প্রমাণে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি জেলের মেয়াদের কথাও বলা হয়েছিল। কোনও ব্যক্তিকে মারধরে জড়িতদের অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী, তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের কথাও বলা হয়েছিল। তবে ওই বিলের গেজেট নোটিফিকেশন হয়নি। তাই আইনি প্রয়োগের প্রশ্নও নেই। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় আইনের সঙ্গে সংঘাত হতে পারে এমন কারণেই ওই আইন রাজ্যে কার্যকর করা হয়নি। ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় অবশ্য গণপিটুনির ধারা ১০৩ (২) রয়েছে। পাঁচজনের বেশি কেউ মারধর করলে তা গণপিটুনি হিসেবে গণ্য হবে। তবে এই মামলাটি যেহেতু ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারায় দায়ের হয়েছে, তাই এই মামলায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতার গণপিটুনির ধারা প্রয়োগের আইনি বিধান নেই।