এভাবেই ভাটার সময় বালি তোলা হয়। —নিজস্ব চিত্র।
নদীর চর থেকে বালি, মাটি তোলার উপরে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেই নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে মহিষাদল ব্লকের অমৃতবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় রূপনারায়ণ নদ থেকে অবাধে বালি চুরি করা হচ্ছে বলে হামেশাই অভিযোগ ওঠে। তা রুখতে সম্প্রতি তৎপর পুলিশ এবং প্রশাসন। শুক্রবারই বাঁকা গাজিপুরের কাছে রূপনারায়ণ নদের চর থেকে সাদা বালি তোলার সময় অভিযান চালায় পুলিশ এবং ভূমি দফতর। তারা দুটি বড় নৌকার মাঝি-সহ সাত জনকে আটক করে। পরে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রশাসন সূত্রের খবর, তেরোপেখ্যা, নাটশাল এবং বাঁকা গাজিপুরে গত কয়েক বছর ধরে রূপনারায়ণের চর কেটে মাটি এবং বালি তোলা হয় বলে অভিযোগ। বাঁকা গাজিপুর এলাকায় প্রচুর পরিমাণে সাদা বালি রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাটার সময় নৌকো দাঁড় করিয়ে ওই বালি তোলা হয়। পরে নদীপথে ওই বালি নৌকায় করে হাওড়ার বাগনান-সহ বিভিন্ন এলাকায় চড়া দরে বিক্রি করা হয়। এর ফলে ভূমিক্ষয় প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। নদীর ভাঙন ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
ভূমিক্ষয় প্রতিরোধ করতে কেউ যাতে বেআইনি ভাবে চরের মাটি বা সাদা বালি কাটতে না পারে, সে জন্য ভূমি দফতরের করফে কড়া নির্দেশিকা রয়েছে। তারপরেও দিনের পর দিন বেআইনিভাবে চলছিল নদের চর থেকে সাদা বালিকাটার কাজ। সেচ এবং বন দফতরের উদ্যোগে ম্যানগ্রোভ বন বনসৃজনের প্রকল্পের কাজ রূপনারায়ণ নদের চরে চলছে। বালি উত্তোলনের ফলে সেগুলিও ক্ষতি হচ্ছে। সম্প্রতি সেচ দফতরের বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির একটি প্রতিনিধি দল গিয়েছিল মহিষাদলে। তারা গেঁওখালি এলাকা পরিদর্শন করেন। ওই দলের নেতৃত্বে ছিলেন পাথরপ্রতিমার তৃণমূল বিধায়ক। তিনিও নদী চর থেকে বালি না তোলার ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনিক আধিকারিক এবং জন প্রতিনিধিদের জানান।
এর পরে শুক্রবার অভিযান চালায় পুলিশ। দুটি বড় নৌকার মাঝি-সহ সাত জনকে প্রথমে আটক করে পুলিশ। পরে দুজনের বিরুদ্ধে মহিষাদল থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেন ব্লক ভূমি আধিকারিক। তার ভিত্তিতে দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মহিষাদল ব্লকের ভূমি দফতরের আধিকারিক সুপ্রভাত দাস বলেন, ‘‘কিছুদিন ধরে রূপনারায়ণ নদের চর থেকে বেআইনিভাবে সেখানে বালি চুরি করা হচ্ছিল। আগেও অভিযান চলেছে। সাময়িক বন্ধ রাখা হলেও আবার কয়েকদিন ধরে সেই চুরি চলছিল। তাই অভিযান চালিয়ে দুটি নৌকো এবং দুজন বালি পাচারকারীকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে।’’
উল্লেখ্য, বর্ষাকালে যাতে নদী থেকে বালি তোলা না হয়, সে জন্য রয়েছে আলাদা নির্দেশিকাও। ভূমি দফতর সূত্রের খবর, গত ১৫ জুন থেকে নদী চরে বালি এবং মাটি কাটার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাজ্য সরকার। আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত জারি রয়েছে ওই ‘ব্যান পিরিয়ড’। নদীচর থেকে এই বালি চুরি নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা তথা পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপির জয়ী সদস্য রঘুনাথ পন্ডা বলছেন, ‘‘আগে বালি তোলার জন্য লিজ দেওয়া হত। যে অংশ থেকে বালি তোলা হচ্ছে সেখানে চরা পড়ে গিয়েছে। আসলে এ ধরনের অভিযান হচ্ছে প্রশাসন আর শাসক দলের অর্থ উপার্জনের একটা উপায়।’’ যদিও এলাকার তৃণমূল বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘এভাবে বালি তোলার জন্য কোনও দিন প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। বালি চুরির সঙ্গে সিপিএম আর বিজেপি যুক্ত।’’