মশাবাহী রোগ ঠেকাতে আয়োজনের অন্ত নেই। তা-ও আটকাচ্ছে না মৃত্যু। এ বার ঘাটাল শহরের এক বালকের মৃত্যু হয়েছে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে।
সৌরভ ধাড়া (১০) নামে ওই বালক গত ৪ এপ্রিল থেকে অসুস্থ ছিল। ধুম জ্বর, তীব্র মাথা ব্যথা এবং অচৈতন্য হয়ে পড়া— এই সব উপসর্গ নিয়ে সৌরভকে প্রথমে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে ‘রেফার’ করা হয় কলকাতায়। তারপর বি সি রায় হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল সৌরভের। গত শুক্রবার ভোরে সেখানেই মৃত্যু হয় তার। সৌরভের বাবা মদন ধাড়া বলছিলেন, “ঘাটাল হাসপাতালে ভর্তির কয়েক ঘন্টা পরই কলকাতায় পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে নিয়ে গিয়েও তো ছেলেটাকে বাঁচাতে পারলাম না।”
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানিয়েছেন, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত ৯জন জাপানি এনসেফ্যালাইটিসে মারা গিয়েছে। তবে ঘাটালের ঘটনা এখনও তিনি জানেন না। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “সোমবারই ঘটনার কথা শুনেছি। ডেথ সার্টিফিকেটে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের কথাই লেখা রয়েছে। ওই এলাকায় সচেতনতা শিবির হবে।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, স্ত্রী কিউলেক্স মশা থেকে জাপানি এনসেফ্যালাইটিসের জীবাণু ছড়ায়। শুয়োর ও পরিযায়ী পাখিরা এই জীবাণুর বাহক। এ ছাড়া নোংরা জল এবং কচুরিপানা ভর্তি পুকুরও এই মশার আঁতুরঘর। জেলার সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “কী ভাবে সৌরভের শরীরে এই রোগের জীবাণু ঢুকলো তা পরিষ্কার নয়। তবে আতঙ্কের কিছু নেই। স্বাস্থ্য দফতর সতর্ক রয়েছে।”
সৌরভের বাড়ি ঘাটাল পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সিংহপুরে। সোমবার তার মৃত্যুর খবর জানাজানি হতেই বাড়িতে যান জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা, ঘাটালের পুরপ্রধান বিভাস ঘোষ এবং পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা। গত বছর ঘাটালে ডেঙ্গিতে এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছিল। এ বার মশাবাহী অসুখ ঠেকাতে পুরসভাগুলির কাছে আগাম নির্দেশ এসেছে নবান্ন থেকে। ঘাটালের পুরপ্রধান বিভাসবাবু দাবি করছেন, “মশার বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে শহর জুড়ে নানা কর্মসূচি চলছে।” যদিও মশা মারতে ঠুঁটো ঘাটাল পুরসভা। শহর জুড়ে অপরিষ্কার নর্দমা, জমা জলে মশার উপদ্রব, পুকুরগুলি কচুরিপানায় ভর্তি। সৌরভের যেখানে বাড়ি, সেই ঝুমি নদীর পাড়ে তো নিকাশির ব্যবস্থাই নেই। যাবতীয় বর্জ্য পড়ে নদীতে। এ দিন সৌরভের বাড়ির আশপাশে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হয়েছে।