ধৃত রবীন্দ্রনাথ দিন্দা। নিজস্ব চিত্র
গোষ্ঠীকোন্দলে এক তৃণমূল নেতাকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় ফেরার থাকা এক অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করল। ধৃত রবীন্দ্রনাথ দিন্দা ঘটনার সময় তৃণমূল কর্মী থাকলেও পরে দল বদলে বিজেপিতে চলে আসে। রবিবার রাতে পটাশপুর ইচ্ছাবাড়ি গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে থবর, খুনের ঘটন ঘটে ২০১৪ সালে। খুনের পর থেকে অভিযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ফেরার ছিল বলে পুলিশের দাবি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৯ সালে রবীন্দ্রনাথ বিজেপিতে যোগ দেয়। তবে অনেক আগে থেকেই সে এলাকায় ফিরে এসেছিল। যদিও পুলিশ তখন তাকে গ্রেফতার করেনি। বিজেপির অভিযোগ, সেই সময় রবীন্দ্রনাথ তৃণমূলে তাকায় তাকে ধরার সাহস দেখায়নি পুলিশ। এখন বিজেপিতে চলে আসায় প্রতিহিংসায় তৃণমূলের নেতৃত্বের নির্দেশে পুলিশ রবীন্দ্রনাথকে গ্রেফতার করেছে। অভিযুক্ত হলে কেন তাকে আগে গ্রেফতার করা হয়নি তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পটাশপুর থানার পুলিশ। যদিও পুলিশের দাবি, গ্রেফকতারি পরোয়ানা পেয়েই রবীন্দ্রনাথকে ধরা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পটাশপুর-২ ব্লকের আড়গোয়াল বরাবরই রাজনৈতিক ভাবে উত্তেজনা প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। বাম আমলেও এই এলাকা বোমা-গুলিতে সন্ত্রস্ত থাকত। রাজ্যে রাজনৈতিক পালা বদলে তৃণমূল আড়গোয়াল গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করে। বামআশ্রিত দুষ্কৃতীরা পরে তৃণমূলে ভিড়ে যায়। আড়গোয়াল গ্রামের বাম নেতা চিত্ত বর তৃণমূল যোগ দেন। তৃণমূলের যোগ গিলেও এলাকায় একাধিক রাজনৈতিক সংঘর্ষে বোমাবাজি ও মারধরের ঘটনায় তাঁর নাম জড়ায়। নব্য বনাম আদি তৃণমূলের দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। অভিযোগ, বিপক্ষ শিবিরের বেশ কয়েক জনকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে চিত্তর বিরুদ্ধে। এক সন্ধ্যায় চিত্ত দলবল নিয়ে একটি দোকানে আড্ডা মারছিলেন। অভিযোগ সেই সময় তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকেরা তাঁকে ঘিরে ধরে। লাঠি সোটা নিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে। মৃত তৃণমূলের নেতার পরিবার অপরেশ সাঁতরা গোষ্ঠীর চোদ্দো জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করে। গ্রেফতারের পর অভিযুক্তদের ৬ জন জামিন পেয়ে যায়। বাকিরা পুলিশের খাতায় ফেরার ছিল। ইতিমধ্যে একজন অভিযুক্তের মৃত্যু হয়। বাকিরা এলাকায় থাকলেও তৃণমূল কর্মী হওয়ায় পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেনি বলে অভিযোগ। বছর দেড়েক আগে অভিযুক্ত রবীন্দ্রনাথ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। বতর্মানে তিনি ইচ্ছাবাড়িতে সক্রিয় বিজেপি কর্মী হিসেবে পরিচিত। ধৃতদের বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় রবিবার রাতে অভিযুক্তকে সিয়াড়ি থেকে গ্রেফতার করে। এই নিয়ে ঘটনায় মোট ছ’জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
বিজেপিতে যোগ দেওয়াতেই কি রবীন্দ্রনাথকে গ্রেফতার করা হল? এর জবাবে আড়গোয়াল অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি অপরেশ সাঁতরা বলেন, ‘‘খুনের ঘটনায় ধৃত ওই ব্যক্তি আগে আমাদের দলের কর্মী ছিল। বর্তমানে সে বিজেপির সক্রিয় কর্মী। আইন আইনের পথে চলবে সে যে রাজনৈতিক দলের হোক না কেন।’’ তা হলে এতদিন তাকে ধরা হয়নি কেন? অপরেশের জবাব, ‘‘এটা পুলিশের বিষয়। তারাই বলতে পারবে।’’
বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অনেকে দলবদল করে বিজেপিতে আসছে। ধৃত ব্যক্তি দলের কর্মী কিনা জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে আইন সবার জন্য সমান। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’’