প্রশাসনিক সূত্রের খবর, আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে কোনও গাফিলতি যে চলবে না, এ দিনের বৈঠকে প্রত্যেকের কাছে সেটা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। নবান্ন যে পুরবোর্ড গঠন নিয়ে কোনও ঝামেলা চাইছে না, জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তা-ও।
ফাইল চিত্র।
রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় বোর্ড গঠনের আগে নতুন করে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোনও জটিলতার সৃষ্টি হোক, তা চাইছে না নবান্ন। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার যে-সুরে বার্তা দিয়েছিলেন, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মঙ্গলবার সব জেলাশাসক এবং জেলা পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করলেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বৈঠকের প্রধান বিষয় ছিল নির্বিঘ্নে পুরবোর্ড গঠনের কাজ শেষ করা। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব জেলার পুলিশ সুপার ও জেলাশাসকদের সমন্বয়ের উপরে জোর দিচ্ছে নবান্ন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ দিনের বৈঠকে সিভিক ভলান্টিয়ারদের কাজের পরিধি স্থির করার পাশাপাশি তাঁদের যথাযথ প্রশিক্ষণের উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর।
হাওড়ার আমতায় ছাত্রনেতা আনিস খানের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সেই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে এক সিভিল ভলান্টিয়ারকে। তার আগেও বিভিন্ন সময়ে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ‘অতিসক্রিয়তা’ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে সরকারকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাচ্ছে, এ দিনের বৈঠকে তাই সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও কাজের পরিধি নির্দিষ্ট করে দিতে বলা হয়েছে জেলাকর্তাদের। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের কাজের ধরন বুঝিয়ে দিতে হবে।
প্রশাসন ও পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের নিয়ে সোমবার বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। নবান্নের খবর, সেই বৈঠকে তাঁর বার্তা ছিল, চোখ-কান খোলা রাখতে হবে পুলিশকে। রাজনৈতিক রং না-দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে হবে গোলমালকারীদের বিরুদ্ধে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ করার কোনও চেষ্টাই যে তিনি মেনে নেবেন না, সেটাও বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মমতা। ওই দিনেই মুখ্যসচিবকে পৃথক বৈঠক করে জেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে বলেন তিনি। তার পরেই এ দিন বৈঠক করেন মুখ্যসচিব।
প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, সাধারণত পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকেন সংশ্লিষ্ট মহকুমাশাসক (এসডিও)। ফলে কার্যত সেই দায়িত্ব বর্তায় সংশ্লিষ্ট জেলার ডিএমের উপরেই। ভোট হয়ে গেলেও পুরসভাগুলির বোর্ড গঠনের কাজ এখনও বাকি। কিন্তু তার আগেই দুই কাউন্সিলরের হত্যাকাণ্ড নাড়া দিয়েছে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ মহলকে। বোর্ড গঠনের আগে আর যাতে আইনশৃঙ্খলাগত কোনও সমস্যা না-হয়, তা নিশ্চিত করতে সাধারণ প্রশাসন এবং পুলিশ-প্রশাসনকে নিয়ে এ দিন বৈঠক করেন মুখ্যসচিব স্বয়ং। বৈঠকে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, কমিশনারেরা ছাড়াও ছিলেন এডিজি (আইনশৃঙ্খলা), এডিজি (সিআইডি), এডিজি (আইবি), সব জ়োনের এডিজি, রেঞ্জ আইজি-ডিআইজি।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে কোনও গাফিলতি যে চলবে না, এ দিনের বৈঠকে প্রত্যেকের কাছে সেটা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। নবান্ন যে পুরবোর্ড গঠন নিয়ে কোনও ঝামেলা চাইছে না, জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তা-ও। নির্বিঘ্নে সেই প্রক্রিয়া শেষ করার ব্যাপারে জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপার বা কমিশনারদের নজর রাখতে হবে। গোয়েন্দা বিভাগকেও (আইবি) বলা হয়েছে, কোনও গোলমালের আগাম আঁচ পেতে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। তেমন কোনও বার্তা পাওয়া গেলে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় তা জানাতে হবে আইবি-কেও। রাজনৈতিক বা অন্য কোনও সমস্যা হলে রং না-দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়াও ঘটনার সবিস্তার রিপোর্ট এবং পদক্ষেপের বিবরণ দ্রুত নবান্নে পাঠাতে হবে জেলা প্রশাসনগুলিকে। প্রশাসনের শীর্ষ মহলের নির্দেশ, স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে যাতায়াত বাড়াতে হবে পুলিশকে।