প্রতীকী ছবি
দেশের পশ্চিম প্রান্তে পঞ্জাবের এক গণ্ডগ্রাম থেকে দক্ষিণ-পূর্বে পশ্চিমবঙ্গের ডায়মন্ড হারবার রেল স্টেশন। এই দীর্ঘ পথ পেরিয়ে তিনি কী ভাবে এখানে পৌঁছলেন, তার উত্তর না আছে তাঁর কাছে, না অন্য কারও কাছে। বছর তিরিশের সেই যুবতীর কথায় অনেক অসঙ্গতি।
ওই যুবতীকে দিন পনেরো আগে রেল পুলিশ যখন দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার রেল স্টেশন থেকে উদ্ধার করে, তখন তিনি আসন্নপ্রসবা। ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে পুত্রসন্তান প্রসব করেন তিনি। তার পরে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে জানা যায়, পঞ্জাবের প্রত্যন্ত এক অজগাঁয়ে তাঁর বাড়ি। লকডাউনে স্বামীর চাকরি চলে যাওয়ার পরে ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। এক সময় হারিয়ে যান গাঁয়ের বাড়ি থেকে।
পশ্চিমবঙ্গ রেডিয়ো ক্লাবের তরফে যোগাযোগ করা হয় যুবতীর ভাইয়ের সঙ্গে। ভিডিয়ো কলে কথাও বলিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় দশ দিন কেটে গেলেও সেই ভাই আসেননি বোনকে নিতে। জানা গেল, এমনিতেই তাঁরা বেজায় গরিব। তার উপরে গত দেড় বছরে লকডাউনে রোজগার তলানিতে। এই অবস্থায় গাঁটের কড়ি খরচ করে ট্রেনে কলকাতায় আসার সামর্থ্যটুকুও নেই তাঁদের।
যুবতীর ভাই ওই রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসকে ফোনে জানান, কোনও মতে টাকা জোগাড় করে তাঁরা হয়তো ডায়মন্ড হারবারে চলে আসতে পারেন। কিন্তু সপুত্র বোনকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে তাঁদের খাওয়াবেন কী? বার বার তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকায় এক সময় নিজের ফোন বন্ধ করে দেন ভাই। অম্বরীশ জানান, তাঁরা পঞ্জাব পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। স্থানীয় থানায় ডেকে ভাইকে যাতে কলকাতায় আসতে বলা হয়, সেই আবেদন জানানো হয়েছে। একই অনুরোধ করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকেও। শেষে পঞ্জাব প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি, প্রাক্তন ক্রিকেটার নভজ্যোৎ সিংহ সিধুকে চিঠি লেখেন অম্বরীশ। সোমবার রাতে সেখানকার প্রশাসনিক কর্তারা অম্বরীশের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, যুবতীর ভাইকে কলকাতায় পাঠানোর বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।
এ দিকে, ওই যুবতীকে নিয়ে বেশ আতান্তরে রয়েছেন ডায়মন্ড হারবার হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ। ৯ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে ১০ তারিখেই তিনি পুত্রসন্তান প্রসব করেন। কিন্তু চিকিৎসকদের আশঙ্কা, মানসিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ নন, এমন মায়ের কাছে নবজাতককে রাখলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাঁর মানসিক অবস্থা দেখে শিশুটিকে সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিটে রাখার নির্দেশ দেন হাসপাতালের প্রিন্সিপাল চিকিৎসক উৎপল দাঁ।
হাসপাতালের অতিরিক্ত সুপার সুপ্রিম সাহা সোমবার বলেন, “প্রথম দিকে ওই মহিলা খুব আক্রমণাত্মক ছিলেন। চিকিৎসক ও নার্সদের রীতিমতো আক্রমণ করেছেন। তবে মানসিক সমস্যার চিকিৎসার পরে, ওষুধ খেয়ে তিনি এখন অনেকটা ভাল আছেন। বাড়ি ফিরে যেতে চাইছেন। বাচ্চাকে দেখতেও চাইছেন।”
পঞ্জাব থেকে আত্মীয়েরা নিতে এলে তখনই যুবতীর হাতে তাঁর সন্তানকে তুলে দেওয়া হবে বলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে।