জন্মদিনে জড়িয়ে আছে বল আর ব্যাট

এ দিক ও ওদিক তাকিয়ে জ্যোতি বসু বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে পুলিশের যে নিরাপত্তা কর্মীরা এসেছেন, তাঁদেরও এখানে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তো!’’ কথাটা এখনও মনে আছে প্রয়াত পার্থসারথির ছেলে সুদীপ্ত নাথের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৯ ০২:২১
Share:

হারানো-সময়: মুর্শিদাবাদে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জ্যোতি বসু এবং সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ৮ জুলাই ছিল তাঁদের দু’জনেরই জন্মদিন। ফাইল চিত্র

১৯৭৩ সাল। রঘুনাথগঞ্জের ম্যাকেঞ্জি পার্কে মঞ্চ বাঁধা হয়েছে। প্রধান বক্তা জ্যোতি বসু। বিকালের জনসভা, তিনি পৌঁছে গিয়েছেন সকালেই। থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে ম্যাকেঞ্জি পার্কের অদূরে পার্থসারথি নাথের বাড়িতে। ডাইনিং টেবল তখনও এত অনায়াস নয় মফসসলে। আসন পড়ল মেঝেতে।

Advertisement

এ দিক ও ওদিক তাকিয়ে জ্যোতি বসু বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে পুলিশের যে নিরাপত্তা কর্মীরা এসেছেন, তাঁদেরও এখানে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন তো!’’ কথাটা এখনও মনে আছে প্রয়াত পার্থসারথির ছেলে সুদীপ্ত নাথের।

সুদীপ্ত তখন বছর পাঁচেকের বালক। গুরুগম্ভীর জ্যোতিবাবুর কাছে তাঁর আব্দার ছিল, ‘‘দাদু আমাকে একটা বল কিনে দেবে?’’ ছেলেকে ধমক দেন বাবা। বাধা দেন জ্যোতি বসু। সিপিএমের বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য মনে করছেন— ‘‘আমরা তো ভুলেই গিয়েছিলাম, ক’দিন পরেই কলকাতা থেকে বল এল। নিজেই কিনে পাঠিয়ে ছিলেন। দলের তখনের জেলা সম্পাদক সত্যনারায়ণ চন্দ্র সে বল নিয়ে এসেছিলেন সুদীপ্তের কাছে।’’

Advertisement

দুপুরের খাওয়ার পর ঘরের ভিতরে জ্যোতি বসু বিশ্রামে আছেন। বিশ্রামের ব্যাঘাত না ঘটে, তার জন্য বাইরে থেকে ঘরের শিকল তুলে দেওয়া হল। আকাশ ভেঙে এল ঝড়বৃষ্টি নামে। পুরনো বাড়ি। দেওয়াল ও ছাদ চুঁয়ে জল ঢুকতে শুরু করল জ্যোতিবাবুর ডাকে শিকল খুলে ঘরে ঢুকতেই পার্থসারথিরা দেখেন, বৃষ্টির জলে ভেসে যাচ্ছে ঘর।

জ্যোতিবাবুর সঙ্গে বার তিনেক জেল খেটেছিলেন কান্দির হিজল এলাকার জংলি মোড়ল। হিজল জানে, ১৯৭৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পর জংলি মোড়লের আবেদনে টানা ৬ মাস ত্রাণের ব্যবস্থা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। এখনও মনে আছে জংলির।

সে বার জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএমের প্রার্থী জয়নাল আবেদিন। জঙ্গিপুর মহকুমায় তখন ভাগীরথীর উপর সেতু ছিল না। নদীর এ পাড়ে জঙ্গিপুর শহর। অন্য পাড়ে রঘুনাথগঞ্জ। যমজ শহরে যাতায়াতের উপায় নৌকা। জঙ্গিপুরে নির্বাচনী সভা ছিল জ্যোতি বসুর। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবাবুকে রঘুনাথগঞ্জ থেকে জঙ্গিপুরে নিয়ে যাওয়া হবে ওই নৌকা ভাড়া করেই।

নিরাপত্তার কারণে পুলিশ বেঁকে বসেছিল সে দিন। বিপরীতে দলও নাছোড় বান্দা। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছাকে আমল দেওয়া হয়। নৌকাতেই উঠে তিনি বসেন। বলেন, ‘‘বোটেই কেন নদী পার হতে হবে? লালগোলা দিয়ে সড়ক পথে জঙ্গিপুর যাওয়া যেত।’’ মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য উত্তর দেন, ‘‘পার হলেই বুঝতে পারবেন।’’ নদী পার হতেই তিনি দেখেন, ‘এখানে ব্রিজ চাই’ লেখা ব্যানার প্ল্যাকার্ড হাতে হাজার জনতা। মাথা নাড়েন জ্যোতিবাবু। ফিরে গিয়েই সে বার সেতুর ড্রইং চেয়ে বসেন পূর্ত দফতরের কাছে। তৈরি হয় সেতু। রঘুনাথগঞ্জ আজও জানে, ‘ও সেতু জ্যোতিবাবুর জন্যই হল!’

বছর দুয়েক আগে, আরও এক জনের এ জেলায় আসা এবং ঘণ্টা কয়েকের মধ্যেই সকলের মন-কেড়ে ফিরে যাওয়া— খুব মনে পড়ে বহরমপুরের। স্থানীয় একটি স্কুলের সেই ছাত্রটির এখনও মনে আছে, ‘‘আমার হাত ধরে দাদা শিখিয়ে দিলেন, ব্যাটটা এত চেপে ধরবি না রে, পিছনের হাতটা একটু ঢিলে রাখতে হবে, না হলে...’’

না হলে যা হওয়ার তাই হয়েছিল তার। সময় মতো ব্যাট তুলতে না পেরে বল এসে লেগেছিল সটান কপালে। তার পর খেলা ছেড়েই দিয়েছে সে। সোমবার, সেই ‘দাদা’রও ছিল জন্মদিন। ছেলেটি বলছে, ‘‘সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নামটা এখনও গায়ে কাঁটা দেয়। মনে পড়ে দাদা আমায় হাত ধরে শিখিয়েছিলেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement