‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুডিশিয়াল সার্ভিসে’র সমস্ত সদস্য এই সুবিধা পাবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতা (ডিএ)-র দাবিতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের সংঘাত চলছেই। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে ডিএ-র দাবি নিয়ে আলোচনায় বসবে দু’পক্ষ। তারই মধ্যে রাজ্যের ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুডিশিয়াল সার্ভিসেসে’ কর্মরত সদস্যদের জন্য কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র ঘোষণা করে দিল রাজ্য সরকার। ১৩ এপ্রিল এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে বিচারব্যবস্থা দফতর। সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুডিশিয়াল সার্ভিসে’ বর্তমানে কর্মরত সদস্যদের জন্য ডিএ ঘোষণা করছে রাজ্য সরকার। চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে এই ডিএ নীতি কার্যকর হবে। কেন্দ্রীয় হারে দেওয়া হবে মোট ৪২ শতাংশ ডিএ। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুডিশিয়াল সার্ভিসে’র সমস্ত সদস্য এই সুবিধা পাবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের এমন বিজ্ঞপ্তিতে ডিএ-র দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীদের ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়েছে। তাদের প্রশ্ন, “এক যাত্রায় পৃথক ফল হবে কেন?” সরকারি কর্মচারীদের এমন যুক্তির পাল্টা এক সরকারি আধিকারিক বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী জুডিশিয়াল সার্ভিসে কর্মরত সদস্যেরা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পেয়ে থাকেন। এ ছাড়াও যাঁরা দিল্লিতে রাজ্য সরকারের হয়ে চাকরি করেন, তাঁরাও কেন্দ্রীয় হারেই ডিএ পান। এই বিষয়টি নতুন কিছু নয়, যে হেতু এখন ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন চলছে তাই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।”
এ প্রসঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের সংগঠন কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরী বলেন, “আমাদের আন্দোলন হচ্ছে ডিএ-র দাবিতে। সব সরকারি কর্মচারী যাতে প্রাপ্য ডিএ পান, আমাদের লড়াই সেই অধিকার পেতে। কেউ কেন্দ্রীয় হারে ডিএ পাবেন কেন? তার বিরোধিতা করা আমাদের কাজ নয়। যাঁরা ডিএ পাচ্ছেন তাঁদের সঙ্গে আমাদেরও ৪২ শতাংশ হারে ডিএ পাওয়া উচিত তা রাজ্য সরকারকে বুঝতে হবে।” আবার সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তাপস চক্রবর্তী বলছেন, “রাজ্য সরকার আমাদের দাবি মানতে চাইছে না। অথচ ওয়েস্ট বেঙ্গল জুডিশিয়াল সার্ভিস-এর সদস্যদের একতরফা ভাবে কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। সব দিক থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন বড় অংশের সরকারি কর্মচারী। সরকারের এই দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলছে, চলবে। কারণ ডিএ দেওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য করলে চলবে না।” তবে এই সংক্রান্ত বিষয়টি বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে জানাতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তৃণমূল সমর্থিত কর্মচারী ফেডারেশনের নেতা প্রতাপ নায়েক।
প্রসঙ্গত, ডিএ নিয়ে লাগাতার আন্দোলনের মধ্যেই গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিধানসভায় নিজের বাজেট বক্তৃতায় রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৩ শতাংশ ডিএ-র কথা ঘোষণা করেছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। পরে নবান্ন থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে মোট ৬ শতাংশ দিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় হারের ডিএ-র দাবিতে কর্মবিরতি এবং প্রশাসনিক ধর্মঘটের পাশাপাশি, রাজধানী দিল্লিতে গিয়েও ধর্না দিয়ে এসেছেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের ৫০০-এরও বেশি সরকারি কর্মচারী। এমনই সংঘাতের আবহে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুডিশিয়াল সার্ভিস’-এ সদস্যদের জন্য ডিএ ঘোষণা করে বিতর্কের নতুন পথ খুলে দিয়েছে রাজ্য সরকার, এমনটাই মত প্রশাসনিক মহলের একাংশের।