ফাইল চিত্র।
বাস ভাড়া নিয়ে জট কাটাতে সরকারি কমিটি তৈরি করল রাজ্য। আজ, রবিবার কসবার পরিবহণ দফতরের অফিসে সেই কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, কমিটি বৈঠক করে ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে খসড়া রিপোর্ট তৈরি করবে। তবে ৩০ জুনের আগে সেই রিপোর্ট জমা পড়বে না বলেও ওই সূত্রের দাবি। অনেকেই বলছেন, লকডাউন শিথিল পর্বে বাস না-নামিয়ে কার্যত ঘুরপথে ভাড়া বৃদ্ধির জন্য চাপ দিচ্ছে বাসমালিক সংগঠনগুলি। ফলে কমিটি তৈরি করেও সঙ্কট কাটবে না আর রিপোর্ট পেতেই তো জুন শেষ। শুধু অব্যাহত থাকবে আমজনতার হয়রানি।
এই পরিস্থিতিতে অনেকেই বলছেন, বিপদের সময়ে শুধু ভাড়া বাড়ানোর জন্য পরিষেবা ব্যাহত করা হচ্ছে কেন? বাসমালিকদেরও তো সামাজিক দায় রয়েছে। কেউ আবার বলছেন, ২০১৩-১৪ এবং ২০১৭-১৮ সালে ভাড়া বৃদ্ধির জন্য কমিটি হলেও শেষমেশ সরকারের ‘ইচ্ছামতো’ ভাড়া বেড়েছে। তা হলে এখানেও সরকার দফায় দফায় আলোচনা করতে পারত। তবে অনেকে বলছেন, বাস মালিকেরা যে হারে ভাড়া বৃদ্ধির কথা বলেছিলেন, তা সরকারের পক্ষে মানা সম্ভব ছিল না। আবার বাসমালিক সংগঠনগুলির মধ্যেও ভাড়া নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
বাসমালিকদের যুক্তি, লকডাউন পর্বে তাঁদের ব্যাঙ্কে ঋণের মাসিক কিস্তি দিতে হয়েছে। কর ছাড়ের ব্যাপারে সরকার আশ্বস্ত করেনি। উল্টে এত মাস বাস বন্ধ থাকায় ব্যাটারি-সহ অনেক যন্ত্রাংশ বিকল হয়েছে। বাস নামানোর আগে সেগুলি সারাই করতে খরচ হয়েছে। তার উপরে নিত্য লোকসানের বহন করা মুশকিল। জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ট্রেন না চললে দৈনিক ৩৫ লক্ষ যাত্রী শহরে আসবেন না। এই অবস্থায় সব বাস রাস্তায় নামলে ক্ষতি হবে।’’ তবে বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের টিটো সাহার মতে, ‘‘যে সব রুটে বাস চলছে, তার কয়েকটিতে যাত্রী বাড়ছে।’’
প্রশ্ন উঠছে, গণপরিবহণ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না-হলে মানুষ বেরোবেন কোন ভরসায়? স্বাভাবিক সময়ে কলকাতা ও শহরতলি মিলিয়ে প্রায় ৬০ লক্ষ যাত্রী হয়। সেখানে বর্তমানে দৈনিক পাঁচ লক্ষ যাত্রী হচ্ছে। বাসের সংখ্যা বাড়লে সেই যাত্রী বাড়বে বলেও মনে করছেন অনেকে। এ প্রসঙ্গে অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ সম্পূর্ণ নতুন পরিস্থিতি। তাই কী ভাবে আয়-ব্যয়ের সমতা রক্ষা করা যাবে, তা দেখা জরুরি। পুরনো ভাড়ায় ক্ষতি হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু ভাড়া বাড়ালেই ক্ষতি পূরণ হয়ে যাবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।’’ পরিবহণ দফতরের এক অফিসার বলেন, ‘‘বাসের ভাড়া ঘনঘন পরিবর্তন করা কাজের কথা নয়। করোনা পরিস্থিতিতে রাস্তায় লোকজন কম। তবে সেই অবস্থা বদলাচ্ছে। সব দিক দেখেই পদক্ষেপ করা জরুরি।’’
তা হলে? সমাধান কোথায়? আমজনতারই বা কী হবে?