দুই রূপেই কি শোভন-প্রকাশ

খবরটা হাওয়ায় ভাসছিল ক’দিন ধরেই। বৃহস্পতিবার তাতে সিলমোহর দিলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার রাজ্যের নতুন মন্ত্রীদের তালিকা ঘোষণা করে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, মন্ত্রী হচ্ছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৬ ০১:৫২
Share:

খবরটা হাওয়ায় ভাসছিল ক’দিন ধরেই। বৃহস্পতিবার তাতে সিলমোহর দিলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার রাজ্যের নতুন মন্ত্রীদের তালিকা ঘোষণা করে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, মন্ত্রী হচ্ছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। তার পরেই সামনে এসেছে নতুন প্রশ্ন— সে ক্ষেত্রে কলকাতার মেয়র হবেন কে? জল্পনা চলেছে সম্ভাব্য নাম নিয়েও।

Advertisement

অবশ্য আইনগত ভাবে কলকাতার মেয়রের মন্ত্রী হওয়ায় কোনও বাধা নেই। শোভনবাবুকে মেয়র পদ থেকে সরানো হবে কি না প্রশ্নে মমতা নিজেও এ দিন বলেন, ‘‘তা কেন? মেয়র পদের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কোনও দফতরই দেওয়া হবে শোভনকে।’’

সে ক্ষেত্রে প্রথম সম্ভাবনা পুর দফতর। যদি সত্যিই সেটা হয়, সে ক্ষেত্রে পুরসভা ও পুর দফতরের ভার একই লোকের হাতে থাকা নীতিগত ভাবে ‘শোভন’ কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেকেরই।

Advertisement

মেয়র এবং পুর দফতরের মন্ত্রী, দুটো পদে তিনি নিজে কতটা স্বচ্ছন্দ? শোভনবাবুর সাফ জবাব, ‘‘রামের জন্মের আগেই রামায়ণ লেখার ক্ষমতা আমার নেই। আমি বাল্মীকি নই।’’

সেই সঙ্গেই তিনি জানান, মন্ত্রী হওয়ার খবর তিনি নিজেও জেনেছেন টিভি দেখেই। তবে দলনেত্রীর প্রতি তাঁর আস্থা অটুট, মনে করিয়ে দিয়েছেন সে কথাও।

আগমনির সুর। আজ শপথ নেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যেরা।
বৃহস্পতিবার, তারই প্রস্তুতিতে পুলিশ ব্যান্ড। রেড রোডে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের মতে, আইনি বাধা না থাকলেও মেয়র পুরমন্ত্রী হলে নীতিগত ভাবে সমস্যা হতে পারে। একই ব্যক্তি পুরসভার মেয়র এবং যে দফতরের অধীনে পুরসভা, সেই দফতরেরই মন্ত্রী থাকলে কাজের ক্ষেত্রে ‘বিশেষ সুযোগ’ দেওয়া-নেওয়ার অভিযোগ উঠতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। অশোকবাবুরও বক্তব্য, ‘‘সেটা হলে ভাল হবে না।’’ তবে তাঁর মতে, দীর্ঘদিন কাউন্সিলর, মেয়র পারিষদ এবং মেয়র পদে কাজ করা শোভন চট্টোপাধ্যায় দায়িত্ব পেলে দফতরের ভালই হবে।

অশোকবাবুরই দলের নেতা তথা কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য অবশ্য এই সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘‘মেয়র মন্ত্রী হতেই পারেন। তবে তাঁকে মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে।’’ তিনি জানান, কলকাতার মেয়র লোকাল গভর্নমেন্টের প্রধান। রাজ্য প্রশাসনের অধীনে থেকে না থেকে সরাসরি তিনি প্রশাসন চালান। দুটো পুরো আলাদা অস্তিত্ব। সরাসরি রাজ্য সরকার মেয়রের কাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাই মেয়র পদে থেকে মন্ত্রী থাকা যায় না বলেই তাঁর দাবি।

রাজ্যের একাধিক আমলার মতেও, পুর দফতরের দায়িত্ব মেয়রকে দেওয়া হলে সমস্যা বাড়বে পুরসভাকে বরাদ্দ দেওয়া নিয়েও। কারণ সে ক্ষেত্রে মন্ত্রী হিসেবে নিজের পুরসভাকে বাড়তি সুযোগ দেওয়ার প্রবণতাও বাড়তে পারে। এ নিয়ে অন্য পুরসভায় অসন্তোষ বাড়ার সম্ভাবনা থাকবে বলে মনে করছেন ওই আমলারা। এমনিতেই কলকাতা পুরসভাকে অনেক বেশি সরকারি সাহায্য দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে তৃণমূল-শাসিত পুরসভায়। বিদ্যুৎ বিল বাবদ বাড়তি সরকারি সাহায্য অন্য কোনও পুরসভা কেন পায় না, সে ক্ষোভও একাধিক বার সামলাতে হয়েছে পুর দফতরকে।

অনেক আমলার মতে, এ ছাড়াও মেয়র পুর দফতরের মন্ত্রী হলে কলকাতা পুরসভার কোনও ভুল সিদ্ধান্তের বিচারে স্বচ্ছতার প্রশ্ন উঠবে। কলকাতা পুরসভার ভুল কাজের দায় বর্তাবে মেয়রের উপরে। আর তার বিচারের ভার থাকবে দফতরের মন্ত্রীর উপরে। সে ক্ষেত্রে বিচার বা ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ কি ‘সঠিক’ হবে? উঠছে এমন নানা প্রশ্ন।

এরই মধ্যে নতুন মেয়র কে হবেন, তা নিয়েও তুমুল জল্পনা শুরু হয়েছে শহরে। বর্তমান মেয়র পারিষদদের মধ্যে দেবাশিস কুমার, অতীন ঘোষ, দেবব্রত মজুমদার এবং পুর চেয়ারপার্সন মালা রায়কে নিয়ে গুঞ্জন ছিল আগেই। সেই তালিকায় যোগ হয়েছে যাদবপুরের পরাজিত প্রার্থী মণীশ গুপ্তের নাম। মমতা নিজেও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ভোটে হারলেও মণীশবাবুকে অন্য কাজে লাগানো হবে। তাঁকে নিয়ে জল্পনার সূত্রপাত সেখানেই। অনেকে বলতে শুরু করেছেন, সে ক্ষেত্রে মণীশবাবুকে আগে ভোটে জিতে কাউন্সিলর হয়ে আসতে হবে। তত দিন পর্যন্ত দায়িত্বে কি শোভনবাবুই? কী হবে না হবে, সদুত্তর মেলেনি।

এর মধ্যেই মমতার বলা ‘‘তা কেন?’ ফের নতুন করে উস্কে দিয়েছে সেই একই প্রশ্ন— তবে কি দুই পদেই ‘শোভন অধিষ্ঠান’?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement