ফাইল চিত্র।
বীরভূমের সদর শহর সিউড়ি ঘেঁষা আবাদপুর অতিথি নিবাসে মঙ্গলবার বেশ ভিড়। মহম্মদবাজার ব্লকের ডেউচা-পাঁচামিতে, প্রস্তাবিত কয়লা খনি গড়ে তোলার নোডাল এজেন্সি রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম বা পিডিসিএলের অফিস এই অতিথি নিবাসেই। সেখানে রোজই আবেদন জমা করতে আসছেন খনি এলাকার জমি দিতে ইচ্ছুক বাসিন্দারা। মঙ্গলবার সেখানেই দেখা হল দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী মনতা সরেনের সঙ্গে। হরিণশিঙা থেকে বাবা শিবলাল সরেনের সঙ্গে এসে শুধু জমি দানের স্বঘোষণাপত্রই নয়, নিজেও চাকরির জন্য আবেদন জানালেন মনতা। আবেদনের নম্বর ১৫৮৭। মনতা ও তাঁর বাবা, দু’জনেই বললেন, ‘‘এলাকায় খনি হোক চাই আমরা। চাই, আমাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হোক।’’ নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ওই তল্লাটের মানুষের আশা আরও বেড়েছে, সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার পরে। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ওই খনি এলাকায় জমিদাতাদের পরিবারের এক জনকে যোগ্যতা অনুযায়ী জুনিয়র ও সিনিয়র কনস্টেবলের পদে চাকরি দেওয়া হবে। তার জন্য সরকার ৫১০০ পদ তৈরি করেছে।
মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরে প্রশাসনিক তৎপরতা আরও বাড়ছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম ধাপে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত ওই জমিদাতাদের নিয়োগপত্র তুলে দেওয়ার জন্য আবেদনকারীদের আবেদন খুঁটিয়ে দেখার কাজ চলছে। বিশেষ করে খনির কাজে যে অংশ থেকে হাত পড়বে, সেই দেওয়ানগঞ্জ, নিশ্চিন্তপুর ও হরিণশিঙা মৌজা থেকে যাঁরা আবেদন করেছেন, প্রশাসনের ‘বিশেষ নজরে’ রয়েছে তাঁরা।
বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় বলছেন, ‘‘কখন কী ভাবে নিয়োগ পত্র দেওয়া হবে, তা নিয়ে কিছু বলছি না। তবে সবটাই অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে, এটুকু বলব।’’
জেলা প্রশাসনের একাংশ মনে করছে, একবার চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হলে, বিরোধী স্বরও বিলীন হবে। কেননা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে প্রস্তাবিত খনি এলাকা থেকে জমা পড়া প্রচুর সংখ্যক আবেদনের তালিকায় জমি দিতে ইচ্ছুক ও চাকরির আবেদন পত্রের সংখ্যা দেড় হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। ডেউচা-পাঁচামির আদিবাসী নেতারাও জানাচ্ছেন, বর্তমানে প্রস্তাবিত খনি এলাকার বড় অংশের মানুষ চাইছেন শিল্প হোক।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দেওয়ানগঞ্জ, হরিণশিঙা ও নিশ্চিন্তপুর মৌজার গ্রামগুলিতে বসবাস করে ৫৫৪টি পরিবার। এ পর্যন্ত চারশোরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে। প্রায় ৮০০ জন চাকরির আবেদন করেছেন।