—প্রতীকী ছবি।
একটু খুঁজলেই মাসখানেক আগে হয়ে যাওয়া লোকসভা ভোটের প্রচার এখনও চোখে পড়ে। দেওয়াল লিখন বা দু’-একটা ফ্লেক্স, ব্যানার রয়েছে প্রার্থীদের নামে। পেরিয়ে আসা সেই ভোট নিয়ে তরজা আর তার ফল এখনও তাজা। সে সবের মধ্যে রাজ্যে যে চারটি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন হচ্ছে, তার অন্যতম এই বাগদা।
বিজেপির বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস দলবদল করে লোকসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন। তাই এক মাসের মধ্যে ফের এই উপনির্বাচন হচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা বিধানসভা আসনে। স্থানীয় দাবিদাওয়া নিয়ে যে আলোচনা প্রাসঙ্গিক হতে পারত, বাগদার উপনির্বাচনে এ বারও সে সব প্রায় নেই-ই। বিজেপি আর তৃণমূল, দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের আগ্রহ আর আয়োজনেও তার কোনও প্রতিফলন নেই! যে বনগাঁ লোকসভা আসনের অন্তর্গত এই বিধানসভা আসন, তা গত দুই নির্বাচনেই বিজেপির দখলে। গত ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটেও এই আসন জিতেছে তারাই। সে দিক থেকে উপনির্বাচনে বাগদা দখলে রাখাই লক্ষ্য বিজেপির। আর উপনির্বাচনের সুযোগে মতুয়া-অধ্যুষিত, তফসিলি সংরক্ষিত আসনটিতে জায়গা পেতে মরিয়া তৃণমূল।
প্রায় এক দশক এই আসন মতুয়া আর তফসিলি চর্চার মধ্যেই আটকে রয়েছে। বাংলাদেশ লাগোয়া কৃষিপ্রধান এই বিধানসভা আসনের অন্য কোনও চাওয়া-পাওয়া এই ভোটেও জায়গা পাচ্ছে বলে স্পষ্ট নয়। বিজেপির দাবি, মতুয়া ভোট তাদেরই। তাই এই অকাল ভোটেও এগিয়ে তারাই। দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডলের পরিষ্কার হিসাব, ‘‘গত ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে আমরা জিতেছিলাম, ৯ হাজার ৭৯২ ভোটে। শেষ লোকসভা ভোটে সেই ব্যবধান বেড়ে ২০ হাজারের বেশি হয়েছে।’’ তবে স্থানীয় প্রার্থীর দাবিতে বিজেপির অন্দরে কোন্দলের কাঁটা আছে। এক জন ‘বিজেপি সমর্থিত’ দাবি করে নির্দল প্রতিদ্বন্দ্বীও রয়েছেন।
পাল্টা দাবিতে সেই মতুয়া ভোটের কথা বলছে তৃণমূলও। বিজেপির বিধায়ক-পদ ছেড়ে লোকসভায় তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে হেরে গেলেও উপনির্বাচনে ফল ভাল হবে বলে দাবি করছেন তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ। গত ২০১৯ সালের লোকসভা থেকে এই আসনে পিছিয়ে থাকা তৃণমূলের এই দাবির পক্ষে ভরসাও মতুয়া ভোট। বিশ্বজিতের কথায়, ‘‘মতুয়াদের মর্যাদা দিয়ে বিধানসভায় মধুপর্ণা ঠাকুরকে প্রার্থী করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মতুয়া ধর্মগুরু ঠাকুর পরিবারের মেয়ে।’’ তিনি অবশ্য বলছেন, বিধায়ক হিসেবে বৈদ্যুতিক চুল্লির শ্মশান, রাস্তার মতো যে উন্নয়নের কাজ তিনি করেছেন, তার সুফল তৃণমূল পাবে। তবে স্থানীয় স্তরে দুর্নীতি, ‘কাটমানি’র অভিযোগে জর্জরিত তারাও। সে সব পিছনে ঠেলতে বিশ্বজিতের হাতে টিভির ধারাবাহিকের অভিনেতা-অভিনেত্রীর নামের তালিকা। প্রচারে ঘুরছেন তাঁরাও।
মণ্ডপঘাটা মোড়েই ঝকঝকে দোতলা বাড়ি জুড়ে গমগম করছে বিজেপির নির্বাচনী কার্যালয়। শেষ বিধানসভা ভোটেও এই বাগদা যে তাদের দখলে, সে বাড়ির হালচালে তা স্পষ্ট। উল্টো দিকেও ওই রকমই একটি বাড়ি জুড়ে তৃণমূলের আয়োজন। বিশাল ‘সাউন্ডবক্স’ দিনরাত জানান দিচ্ছে যে, তারাই এখানে ‘চ্যালেঞ্জার’!
বিজেপি প্রার্থী বিনয় বিশ্বাস আর তৃণমূলের প্রার্থী মধুপর্ণার পোস্টার, ব্যানার আর ফ্লেক্স আমবাগান, কলাবাগান হয়ে একেবারে কাঁটাতারের বেড়া লাগোয়া রাস্তার ধারেও। বাম ও কংগ্রেস আছে ঠিকই তবে চোখের দেখায় তা সামান্যই। বাগদার ‘রাজধানী’ হেলেঞ্চা বাজারের মধ্যে টিনের গুদামের মতো অফিসে বসে বাম সমর্থিত ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী গৌর বিশ্বাস অবশ্য দাবি করছেন, ‘‘মতুয়া, তফসিলি আর ধর্মীয় মেরুকরণ কাজ করবে না। বিজেপির মিথ্যা আশ্বাস, তৃণমূলের দুর্নীতিও মানুষ দেখেছেন। এ বার গোপন ভোট হবে।’’ কংগ্রেস প্রার্থী অশোক হালদারের প্রচারে দু’টি মাইক বাঁধা টোটো ঘুরতে দেখা গিয়েছে রাস্তায়।
বিজেপি আর তৃণমূলকে ঘিরে তৈরি ‘দ্বিদলীয় ব্যবস্থা’র বাইরে বেরোনো বাম-কংগ্রেসের পক্ষে কঠিনই। তাদের পথে বাধা কেন্দ্র আর রাজ্যের দুই শাসক ‘বড়দাদা’। সেই ‘দাদারা’ অবশ্য নজর রাখছেন এক সময়ে বাগদার বেশ কয়েক বারের বিধায়ক কমলাক্ষী বিশ্বাসের ছেলে গৌরের উপরে। বামেরা বিরোধী ভোট রামের থেকে ফেরাতে পারলে সুবিধা তৃণমূলের। আর এখানকার ১৯-২০% সংখ্যালঘু ভোটে বামেরা ভাগ বসাতে পারলে চিন্তামুক্ত বিজেপি!