প্রতীকী ছবি।
এখন তাঁরা আর রাজনৈতিক বন্দি নন। তবে তাঁদের ঘনিষ্ঠদের দাবি, রাজনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্যই পারো পটেল, সদানলা রামকৃষ্ণ, সুকুমার মণ্ডল, অনুপ রায়, কল্পনা মাইতিরা আজ জেলবন্দি। একাধিক রোগ শরীরে বাসা বাঁধলেও যথাযথ চিকিৎসার অভাবে ওই সব বন্দি সমস্যায় পড়ছেন বলে অভিযোগ। যদিও কারা দফতরের দাবি, ওই বন্দিদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়।
মাওবাদী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত অভিযোগে ধৃত অন্তত ৯০ জন এখন রাজ্যের বিভিন্ন জেলে আছেন। কয়েক জন ছাড়া তাঁদের প্রায় সকলেই বিচারাধীন বন্দি। সেই তালিকায় ষাটোর্ধ্ব বন্দির সংখ্যা ১০। অন্য কয়েক জন সেই অঙ্ক না-ছুঁলেও অসুস্থ। কিন্তু নানা কারণে সেই সব বন্দির চিকিৎসা নিয়ে সরকারি অবহেলা রয়েছে বলে অভিযোগ মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের। ওই ৯০ জনের প্রায় সকলের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ থাকায় বর্তমান আইন অনুযায়ী তাঁরা এখন রাজনৈতিক বন্দির তকমা পান না।
২০১২ সাল থেকে জেলে আছেন তেলঙ্গানার বাসিন্দা, বছর পঁয়তাল্লিশের পারো পটেল। দমদম সেন্ট্রাল জেলের ওই বন্দি দৃষ্টিশক্তি হারাতে চলেছেন বলে আশঙ্কা তাঁর ঘনিষ্ঠদের। শ্রবণশক্তি কমে যাওয়ায় ‘হিয়ারিং এড’ ব্যবহার করেন তিনি। সেটাও খারাপ বলে জানান ঘনিষ্ঠেরা। প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি সদানলা রামকৃষ্ণও একই বছরে গ্রেফতার হন। ঘনিষ্ঠদের অভিযোগ, তাঁর এক বার অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হলেও হার্টে এখনও ব্লকেজ রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে তাঁর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় না। ওজন কমছে তাঁর।
প্রেসিডেন্সি জেল হাসপাতালে কয়েক মাস ধরে চিকিৎসাধীন আছেন ৬৭ বছরের সুকুমার মণ্ডল। বাইপাস সার্জারি হলেও মাঝেমধ্যে বুকে ব্যথা অনুভব করেন তিনি। ওই জেলেই বন্দি সত্তর ছুঁইছুঁই অনুপ রায়ের শরীরে অ্যাকিউট স্পন্ডিলাইটিস, ডায়াবিটিসের মতো রোগ থাবা বসিয়েছে। সঙ্গে হার্ট ব্লক। দৃষ্টিশক্তিও কমছে তাঁর। একাধিক রোগে কাবু আলিপুর মহিলা জেলের বন্দি কল্পনা মাইতিও। তিনি আট বছর ধরে জেলে আছেন। প্রেসিডেন্সি জেলে থাকা বাপি মুদির নানান শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি রয়েছে থাইরয়েডের সমস্যা। সম্প্রতি শুরু হয়েছে মাথার যন্ত্রণা। কিন্তু কোনও চিকিৎসা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। মেদিনীপুর জেলে দণ্ডিত বন্দি পতিতপাবন হালদার স্পন্ডিলাইটিস, আর্থারাইটিস, দাঁতের রোগে ভুগছেন। অভিযোগ, চিকিৎসা পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে কলকাতার তুলনায় জেলার বিভিন্ন জেল অনেকটাই পিছিয়ে।
ওই বন্দিদের যথাযথ চিকিৎসার দাবিতে কারামন্ত্রী, ডিজি (কারা)-কে চি়ঠি দিয়েছে এডিপিআর। মুখ্যসচিব, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। সংগঠনের নেতা রঞ্জিত শূর বলেন, ‘‘বন্দি হলেও তো তাঁদের নিয়মিত চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু তা অবহেলিত।’’ কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস অবশ্য বলছেন, ‘‘কোনও চিঠি পাইনি। আর সংশোধনাগারের আবাসিকদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
এত দিন বন্দিদের রেফারেল হাসপাতাল ছিল আলিপুর জেলের হাসপাতাল। এ বার সেই স্বীকৃতি পেয়েছে প্রেসিডেন্সি জেল। তাতে বন্দিদের চিকিৎসা আরও সমস্যায় পড়বে বলে তাঁদের ঘনিষ্ঠদের আশঙ্কা। তবে কারা দফতর জানাচ্ছে, আলিপুরের মতোই চিকিৎসা পরিষেবা মিলবে প্রেসিডেন্সিতে।