শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বক্তব্য, এই পরিস্থিতিতে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগই একমাত্র সমাধান। ফাইল ছবি
ছাত্রছাত্রী ৭৭২ জন। শিক্ষক মাত্র এক জন। মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জে সাকার ঘাট জুনিয়র হাইস্কুলে উচ্চ প্রাথমিকে পড়ুয়া-শিক্ষক অনুপাতটা ঘটনাচক্রে এমনই দাঁড়িয়েছে।
কী ভাবে স্কুল চালান? প্রধান শিক্ষক সামশুল হক বললেন, “এতে কোনও ভাবেই চালানো সম্ভব নয়। তাই আংশিক সময়ের শিক্ষক নিয়োগ করেছি তিন জনের মতো। তা-ও তো শিক্ষক অপ্রতুল। এখনই উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ দরকার।”
আলিপুর জেলার মাদিরাহাটের উত্তর বল্লালগুড়ি জুনিয়র হাইস্কুলে শিক্ষক এক জন, পড়ুয়া ৭১ জন। পার্থ দাস নামে ওই শিক্ষক জানান, সপ্তাহ দুয়েক আগে এক শিক্ষক বদলি নিয়ে চলে যাওয়ায় এখন তিনিই একমাত্র শিক্ষক। কোনও কাজে তিনি বাইরে থাকলে স্কুলের গ্রুপ-ডি কর্মী (স্নাতক) ক্লাস নেন। শিক্ষা দফতরের সঙ্গে কথা বলে আংশিক সময়ের কয়েক জন শিক্ষক রাখার চেষ্টা করছেন তিনি।
উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের অধিকাংশের অভিযোগ, রাজ্যে বেশির ভাগ উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা এতই কমে গিয়েছে যে, পঠনপাঠন চালানোটাই এখন একটা চ্যালেঞ্জ। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বক্তব্য, এই পরিস্থিতিতে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগই একমাত্র সমাধান। কিন্তু আইনি জটিলতায় তা আটকে আছে। উচ্চ প্রাথমিক চাকরিপ্রার্থীদের দু’বার ইন্টারভিউ হয়ে গেলেও নিয়োগ হয়নি এখনও। এখন আবার তদন্তের কারণে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর ডেটা রুম বন্ধ। ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়া ফের অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে আশঙ্কা করছেন চাকরিপ্রার্থীরা।
স্কুলশিক্ষক সামশুল জানান, মুর্শিদাবাদের অধিকাংশ উচ্চ প্রাথমিক স্কুলই শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে। অনেক পড়ুয়া হাই মাদ্রাসায় গিয়ে পড়াশোনা করছে। সেখানে শিক্ষকের সমস্যা অবশ্য এতটা তীব্র নয়।
চাকরিপ্রার্থীরা জানান, গত বছর ১৯ জুলাই দ্বিতীয়বার ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তার পরে এক বছর কেটে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের সহ-সভাপতি সুশান্ত ঘোষ বলেন, “সব থেকে বেশি সমস্যা জেলায়। স্কুলগুলি পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। অনেকেই উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে পড়ে। বেশির ভাগ এলাকাতেই উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই।”
এই পরিস্থিতিতে কবে এসএসসি-র ডেটা রুম চালু করে শিক্ষক নিয়োগ শুরু হবে, সেই দিকে তাকিয়ে আছেন বিভিন্ন উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। চাকরিপ্রার্থীরা জানান, আট বছর ধরে নিয়োগ নিয়ে টানাপড়েন চলছে। সুরাহা অধরাই।
এসএসসি-র চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার বলেন, “উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগ প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করব খুবশীঘ্রই।” কমিশন সূত্রের খবর, ইন্টারভিউয়ে ডাক না-পাওয়া ১০৯৮ জন উচ্চ প্রাথমিক চাকরিপ্রার্থীর নথি আপলোড করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।