—প্রতীকী ছবি।
অতিমারির মধ্যে অনেক ছাত্রছাত্রীই অনলাইন-পাঠের সুযোগ-সুবিধা নিতে পারেননি ট্যাব বা স্মার্টফোন না-থাকায়। থাকলেও যে অনেক ক্ষেত্রে ওই সুযোগ নেওয়া যায়নি, তার কারণ দ্রুত গতির ইন্টারনেটের অভাব। এখন, রাজ্য সরকারের সৌজন্যে ট্যাব বা স্মার্টফোন কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা অধিকাংশ পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাওয়ার পরেও বড় হয়ে উঠছে সেই সমস্যা। অনেক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সেই টাকায় ট্যাব বা স্মার্টফোন কিনে ফেললেও প্রত্যন্ত এলাকার বহু পড়ুয়া জানাচ্ছেন, নেটওয়ার্ক ভাল হওয়া জরুরি। নইলে অনলাইন ক্লাস হবে কী ভাবে? এই অবস্থায় অনেকেরই বক্তব্য, অনলাইন ক্লাসের সঙ্গে করোনা স্বাস্থ্যবিধি মনে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়ারও অনুমতি দেওয়া হোক।
শালবনি হাইস্কুলের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র অর্কপ্রভ পালের মা অর্চনা পাল জানান, স্মার্টফোন কেনার টাকা ইতিমধ্যে তাঁর ছেলের অ্যাকাউন্টে ঢুকে গিয়েছে। ট্যাব নয়, ছেলে কিনবেন স্মার্টফোন। অর্চনাদেবী বলেন, ‘‘টাকাটা পেয়ে খুব সুবিধাই হয়েছে। ওর পড়াশোনোর জন্য একটা নিজস্ব ফোন হবে। কিন্তু আমাদের এখানে নেটওয়ার্ক খুব খারাপ।’’ শালবনিরই একটি স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, ‘‘ছেলেদের বলেছি, ফোন কিনেই তারা যেন আমার ক্লাসের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যোগ দেয়। এখনও কেউ যোগ দেয়নি। প্রত্যন্ত এলাকায় নেট-সংযোগ ভাল নয় বলে অনেকের সমস্যা হতে পারে।’’
বীরভূম, বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর দিনাজপুর-সহ বেশ কিছু জেলার অভিভাবকেরাও মনে করেন, উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা যে-হেতু এগিয়ে আসছে, তাই স্কুলে গিয়ে ক্লাস করা খুব জরুরি। বীরভূমের বোলপুরের এক অভিভাবক বলেন, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় টানা লিখতে হয়। এ বার টেস্ট না-হওয়ায় টানা লেখার অভ্যাসটাই তো হয়নি পরীক্ষার্থীদের। ফলে সরাসরি উচ্চ মাধ্যমিকে বসতে গেলে অনেকের পরীক্ষা দিতে সমস্যা হতে পারে। তাই স্কুলে ক্লাস হওয়া খুব দরকার। অনলাইন ক্লাসে তো টানা লেখার পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। সেই জন্য স্কুল খুলে পরীক্ষা নেওয়া জরুরি।’’ কয়েক জন অভিভাবকের মতে, করোনার প্রকোপ অনেক কমেছে। গ্রামাঞ্চলে ওই রোগের দাপট তুলনায় অনেকটা কম। তাই নতুন স্মার্টফোনের সঙ্গে করোনা বিধি মেনে অনলাইন ক্লাসও চালু হোক।
তবে স্মার্টফোন বা ট্যাব কেনার টাকা পেয়ে সার্বিক ভাবে খুশির হাওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে। কয়েক জন শিক্ষক জানান, আর্থিক অবস্থা ভাল, এমন কিছু পরিবারের পরীক্ষার্থীরা তাঁদের কাছে এটাও জানতে চাইছেন যে, সরকারের দেওয়া ১০ হাজার টাকার সঙ্গে আরও কয়েক হাজার টাকা যোগ করে দামি স্মার্টফোন, ট্যাব অথবা ল্যাপটপ কেনা যাবে কি না।
পরীক্ষার্থীদের অ্যাকাউন্টে স্মার্টফোনের টাকা ঢুকলেও অনলাইন ক্লাস বেশ কিছু স্কুলে সে-ভাবে হচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠছে। কয়েকটি শিক্ষক সংগঠনের মতে, শিক্ষকদের অনলাইন ক্লাস বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে শিক্ষা দফতর এখনও কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি। পরীক্ষার্থীদের হাতে যখন স্মার্টফোনের টাকা পৌঁছে গিয়েছে, তা হলে এ বার অনলাইন ক্লাস বাধ্যতামূলক করার জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করুক শিক্ষা দফতর।