শিক্ষক নিয়োগের কোনও সমাধানই হচ্ছে না। ফাইল ছবি
মালদহের একটি উচ্চ প্রাথমিক তথা জুনিয়র হাইস্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২১৯ বলে ওই জেলার মোথাবাড়ি নিউ সার্কেলের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অয়ন চট্টোপাধ্যায়ের হিসেব। অথচ সেখানে কোনও শিক্ষক নেই। জেলা স্কুল পরিদর্শকের অনুমতিক্রমে পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক স্কুলের দু’জন শিক্ষককে দিয়ে কোনও রকমে ওই স্কুল চালানো হচ্ছে।
এটি নিছকই একটি দৃষ্টান্ত মাত্র। স্কুলের শিক্ষক-সংখ্যার দিক থেকে রাজ্যের সামগ্রিক চিত্র আদৌ কহতব্য নয়। কোনও কোনও জুনিয়র হাইস্কুলে শিক্ষক না-থাকায় কাজ চালানো হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষকদের দিয়ে। কোথাও এত দিন মাত্র এক জন শিক্ষক ছিলেন এবং উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে তিনি বদলি হয়ে যাওয়ায় এখন অতিথি শিক্ষকদের নিয়ে পঠনপাঠন চলছে।
স্কুলশিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় চলছে বাংলায়। শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে আদালতে মামলার পর মামলা হচ্ছে। রোজ চাকরিপ্রার্থীদের বিক্ষোভের সাক্ষী থাকছে শহর কলকাতা। অথচ স্কুলের মূল সমস্যা যা, সেই শিক্ষক নিয়োগের কোনও সমাধানই হচ্ছে না। ফলে শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে রাজ্যের বহু স্কুল। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশের বক্তব্য, খুব দ্রুত নিয়োগ না-হলে স্কুলগুলি আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। দীর্ঘদিন যে-সব স্কুল শিক্ষকহীন, তাদের দিক থেকে অচিরেই মুখ ফিরিয়ে নেবেন অনেক অভিভাবক। আরও কমবে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা।
আলিপুরদুয়ার জেলার একটি জুনিয়র হাইস্কুলের অতিথি শিক্ষক খাইরুল আলম জানান, ওই স্কুলে এক জনই শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু উৎসশ্রী পোর্টালের মাধ্যমে তিনি বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় স্কুলে এখন শিক্ষক-সংখ্যা কার্যত শূন্য। দু’জন অতিথি শিক্ষক দিয়ে কোনও মতে পঠনপাঠন চালানো হচ্ছে। পঞ্চম থেকে অষ্টম, চারটি শ্রেণি আছে ওই জুনিয়র হাইস্কুলে, পড়ুয়ার সংখ্যা ১৪৫। মালদহের দেবীপুর দিয়ারা জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষক রতন মইলদার জানান, তাঁদের প্রতিষ্ঠানও চলছে দু’জন প্রাথমিক শিক্ষক ও একজন অতিথি শিক্ষক দিয়ে।
শিক্ষকের অভাবে ধীরে ধীরে বিভিন্ন স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। শিক্ষকদের একাংশের প্রশ্ন, পড়ুয়ার সংখ্যা আরও কমে যাওয়ার পরে স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ করলে কোনও লাভ হবে কি? শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, ২১ হাজার শিক্ষকের নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে পুজোর আগেই। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, পরীক্ষা, ইন্টারভিউয়ের পরে সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হবে কত দিনে?
পশ্চিমবঙ্গ আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের সহ-সভাপতি সুশান্ত ঘোষ বলেন, “এক দিকে শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে বহু স্কুল। অন্য দিকে দু’বার ইন্টারভিউয়ের পরেও নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হল না। চাকরিপ্রার্থীদের সমস্যা মিটছে না। সমস্যা বাড়ছে বিভিন্ন স্কুলেরও।”