—প্রতীকী ছবি।
অপরাধী নাকি অন্তত এক বার অকুস্থলে ফিরে আসেন। আর জেলের ক্ষেত্রে বলা হয়, একবার জেল খেটে বেরোনর পরে নাকি পারতপক্ষে সে পথ মাড়াতে চান না কেউই।
এখন তো জেল নেই। সবই সংশোধনাগার। তাই খানিকটা ‘সংশোধিত’ হয়ে সমাজে ফিরে গিয়ে সাধারণ প্রয়োজনেও জেলের রাস্তা এড়িয়ে চলেন বেশিরভাগ। তার ফলস্বরূপ জেলে জমতে থাকে জেল ছেড়ে চলে যাওয়া বন্দিদের ফেলে যাওয়া সামগ্রী।
সামগ্রী বলতে মূলত, ঘড়়ি, আংটি, নাকছাবি, কানের দুল, কোমরের বেল্ট। অভিযুক্ত হিসাবে কেউ যখন কারাগারে পা রাখেন, তখনই নিয়ম মেনে খুলে নেওয়া হয় তাঁর সঙ্গে থাকা এই ধরনের সমস্ত সামগ্রী। নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। তাঁর হাতের আংটি খুলে নেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে পার্থ পরে আদালতে অভিযোগও করেন এবং তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলাও হয়।
এ তো গেল সাম্প্রতিক ঘটনা। কিন্তু, রাজ্যের ৬২টি জেলে স্বাধীনতার আগে থেকেই এই নিয়ম চলছে এবং মেয়াদ শেষে অভিযুক্তরা জেল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরেও রয়ে যাচ্ছে তাঁদের সামগ্রী।
জেল কর্তাদের যুক্তি, অভিযুক্ত প্রথমে যে জেলে ঢোকেন, সাজার দীর্ঘ মেয়াদ সেই জেলে কাটিয়ে বেরিয়ে গেলে মূলত এই সমস্যা হয় না। বেরোনর সময়ে লগ-বুক দেখে তাঁর জমা রাখা সামগ্রী তাঁকে ফেরত দেওয়া হয়। কিন্তু, বহু ক্ষেত্রেই অভিযুক্তকে এক জেল থেকে অন্য জেলে স্থানান্তরিত করা হয়। এ ভাবে সাজার মেয়াদ-কালে অভিযুক্তকে একাধিক জেলেও পাঠানো হয়। সেই অভিযুক্তরা ছাড়া পাওয়ার পরে আর পুরনো সামগ্রী নেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ দেখান না।
জেল কর্তাদের কথায়, ‘‘কেনই বা দেখাবেন বলুন! ২০ বছর আগের কোমরের বেল্ট বা ঘড়ি, মূল্যবান নয় এমন অলঙ্কার নিতে কেউ আর প্রথম জেলে আসতে চান না। সেই সব সামগ্রী পড়ে থাকে জেলেই।’’ সংশোধনাগার সূত্রের খবর, এক-দু’বছর নয়, গত প্রায় ১০০ বছর ধরে এ ভাবে রাজ্যের বিভিন্ন জেলে ঘড়ি, আংটি, বেল্টের পাহাড় জমেছে। মাঝে মাঝেই নিলাম হয়। কিন্তু, এক, অপরাধীদের ব্যবহারের জিনিস। দুই, কোনওটাই খুব মূল্যবান নয়। ফলে, বেশিরভাগ সময়েই নিলাম ডাকলেও বিক্রি হয় না কিছুই।
এক জেল কর্তা জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রে মহিলা বন্দিদের সোনার অলঙ্কারও জমা পড়ে। বেশিরভাগ সময়েই ছাড়া পেয়ে অলঙ্কার ফিরিয়ে নিয়ে যান অভিযুক্ত। না-নিলে বিশেষজ্ঞদের ডেকে তার মূল্যায়ন করা হয়। সামগ্রী ফেরত দিতে সংশ্লিষ্ট বন্দির বাড়িতে চিঠি দেওয়া হয়। অভিযোগ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাতে সাড়া পাওয়া যায় না। তিন বছর অপেক্ষার পরে জেলের বোর্ডে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় নিলামের নোটিস। বছরের পর বছর সেই ব্যবস্থা চলে আসছে।
কারা দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, "ওই সমস্ত জিনিস সুরক্ষিত ভাবে রাখা থাকে। পরবর্তী কালে সেগুলো আলিপুর সেন্ট্রাল জেল মিউজ়িয়ামে রাখা যায় কি না, সেই বিষয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।’’