—প্রতীকী ছবি।
তাঁরা সকলেই নানা ভাবে চাল-গমের ব্যবসা করেন। গত কয়েক বছরে সকলেরই হঠাৎ সমৃৃদ্ধি হয়েছিল বলে দাবি স্থানীয় মানুষের। শনিবার নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনায় এমন কয়েক জনের বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। এঁদের কেউ কেউ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক-ঘনিষ্ঠ বলেও স্থানীয় সূত্রে দাবি।
স্থানীয়রাই বলছেন, রাস্তার পাশে বেড়ার ঘরে বাবার সঙ্গে গরুর গাড়ির চাকা তৈরি করতেন নিতাই পাল। এখন এই চালকল মালিক পশ্চিমবঙ্গ এম আর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের রানাঘাট শাখার সম্পাদক। এ হেন নিতাইয়ের চালকল আর রানাঘাট শহরের ওল্ড বহরমপুর রোডের তিনতলা বাড়িতেই শনিবার সকালে হানা দিয়েছে ইডি।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, এক সময়ে রেশন ডিলার বিশ্বনাথ পালের দোকানে কর্মী ছিলেন নিতাই। পরে নিজেও ডিলারের লাইসেন্স জোগাড় করে বিশ্বনাথের সঙ্গে যৌথ কারবার শুরু করেন তিনি। বছর আটেক আগে রানাঘাট শহরের বাইরে আনুলিয়ায় তাঁর চালকল তৈরি হয়। রানাঘাট রেল বাজারে পাইকারি মুদির দোকানও আছে। আগেও তাঁর বিরুদ্ধে নিম্নমানের রেশন সামগ্রী দেওয়ার অভিযোগ ছিল। তবে বাম আমল থেকেই ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রেখে চলতেন বলে দাবি। কোনও রাজনৈতিক দলের মঞ্চে অবশ্য তাঁকে কখনও দেখা যায়নি বলে স্থানীয় মানুষজন জানাচ্ছেন। এম আর ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের নদিয়া জেলা সম্পাদক রেজাউল করিমকে ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি।
হরিণঘাটার বিনয় দেবনাথ রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরের বছরই চালকল খুলেছিলেন বলে সূত্রের খবর। সেই কলের গা ঘেঁষেই তাঁদের পুরনো ভাঙাচোরা বাড়ি। এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছেন, ১৯৫৭ সাল নাগাদ ও-পার বাংলা থেকে হরিণঘাটার নগরউখরায় এসে টিনের বাড়ি তুলে বসবাস শুরু করে বিনয়ের পরিবার। তাঁর বাবা তাঁতসুতোর ব্যবসা করতেন, দাদা এখনও সেলাই সুতোর ব্যবসা করেন।
বিনয় ভুষিমালের ব্যবসা দিয়ে শুরু করে ধান-চালের ব্যবসায় নামেন। কয়েক বছর আগে চালকলের গা ঘেঁষে উঠেছে তাঁর তিনতলা বাড়ি। কিলোমিটার তিনেক দূরে গোয়ালডোবে আরও একটি চালকলের তিনি অংশীদার বলে স্থানীয় লোকজনের একাংশের দাবি। বিনয়ের চালকলেও শনিবার তল্লাশি চালিয়েছে ইডি।
ঘটনাচক্রে, রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত বাকিবুর রহমান হরিণঘাটারই কাষ্ঠডাঙা-২ পঞ্চায়েতের সাতশিমুলিয়ায় একটি চালকলের অংশীদার ছিলেন। রানাঘাটের সাংসদ তথা বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি জগন্নাথ সরকারের দাবি, ‘‘তৃণমূল নেতাদের ছত্রচ্ছায়া ছাড়া এই উত্থান সম্ভব নয়।’’ হরিণঘাটার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা চঞ্চল দেবনাথের দাবি, ‘‘কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিনয় দেবনাথের সম্পর্ক ছিল না
বলেই জানি।’’
শনিবার ইডি হানা দিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয় রাধাকৃষ্ণ মিল এবং তার মালিকদের বাড়িতে। রেশন দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই এলাকায় গুঞ্জন ছড়িয়েছিল, রাধাকৃষ্ণ ফ্লাওয়ার মিল এবং রাধাকৃষ্ণ রাইস মিল কর্তৃপক্ষকে নিয়ে। জ্যোতিপ্রিয়ের সঙ্গে মিল মালিক কালিদাস সাহা এবং মন্টু সাহাদের সুসম্পর্কের কথা এলাকায় অজানা নয়। এবং ২০১১ সালের পর থেকে তাঁরা কতটা ফুলেফেঁপে উঠেছিলেন, তা-ও স্থানীয় লোকজনের নজর এড়ায়নি। স্থানীয় সূত্রের দাবি, রাজনৈতিক ভাবেও কালিদাসেরা প্রভাবশালী হয়ে উঠেছিলেন। গত পুরভোটের আগে বনগাঁয় তৃণমূলের যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে কালিদাস সাহার নাম ছিল ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হিসাবে। পরে ওয়ার্ডের কর্মীদের ক্ষোভে কালিদাসকে প্রার্থী করা হয়নি। কালিদাসদের বাড়িতে অবশ্য জ্যোতিপ্রিয়কে কখনও কেউ আসতে দেখেননি।
এ দিন দিনভর এঁদের সকলের ঘরে ইডির তল্লাশি চলায় কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করা যায়নি।
বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডলের দাবি, ‘‘বনগাঁ শহরের ৯০ শতাংশ সম্পত্তি এখন কালিদাসদের। পেট্রল পাম্প, একাধিক মল, একাধিক বাড়ি, জমি-সহ বিপুল সম্পত্তির মালিক তাঁরা। এ সব সম্ভব হয়েছে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রীর বদান্যতায়।’’ বনগাঁর পুরপ্রধান তৃণমূলের গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘মিলে ইডির তল্লাশি নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করব না। আইন আইনের পথে চলবে।’’