Cyclone Yaas

Cyclone Yaas: এখনও ক্ষতিপূরণ পাননি ইয়াস-বিধ্বস্ত অনেকেই

আমপানের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইয়াসের ক্ষতিপূরণ বিলিতে এ বার বাড়তি সতর্ক ছিল প্রশাসন।

Advertisement

কেশব মান্না

মন্দারমণি শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২১ ০৫:১৩
Share:

জোটেনি ক্ষতিপূরণ। ত্রিপলের নীচেই সংসার। মন্দারমণিতে। —নিজস্ব চিত্র।

ইটের দেওয়াল আর টালির ছাউনির বাড়িটা গোটাটাই গিলেছে সমুদ্র। ত্রিপল ছাওয়া পান-বিড়ির দোকানে সপরিবার আশ্রয় নিয়েছেন দেবী মণ্ডল। স্বামীর মাছ ধরার নৌকাও জলোচ্ছ্বাসে চুরমার হয়ে গিয়েছে। ভেবেছিলেন ইয়াসে সরকারি ক্ষতিপূরণের টাকাটা মিলবে। কিন্তু কোথায় কী!
অমলেন্দু সামন্তর পাকা বাড়ির সঙ্গে চাষজমিও কেড়েছে সমুদ্র। ইয়াসের পরে দেড় মাস তাঁর ঠিকানা হোগলা পাতার কুঁড়ে ঘর। এলাকায় বিজেপির কিষান মোর্চার সাধারণ সম্পাদক অমলেন্দুও ক্ষতিপূরণ পাননি।
মন্দারমণি লাগোয়া দাদনপাত্রবাড় থেকে অরকবনিয়া— উপকূল ঘেঁষা পরপর গ্রামে এমন বহু মানুষেরই অভিযোগ, ইয়াসে ভিটেমাটি হারিয়েও সরকারি ক্ষতিপূরণ জোটেনি। এলাকায় তদন্তেই আসেনি প্রশাসনের কেউ। বছর পঁয়ত্রিশের দেবী বলছেন, "দুয়ারে ত্রাণ শিবিরে গিয়ে আবেদন করে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম ক্ষতিপূরণের টাকা পেলে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু করব। ব্যাঙ্কে গিয়েছিলাম। টাকা কিন্তু ঢোকেনি।’’ অমলেন্দুর অভিযোগ, ‘‘প্রশাসনের লোকজন তদন্তটুকুই করেনি।’’
আমপানের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইয়াসের ক্ষতিপূরণ বিলিতে এ বার বাড়তি সতর্ক ছিল প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ছাড়া কেউ টাকা পাবে না। তা নিশ্চিত করতে আবেদন ধরে ধরে এলাকা ঘুরে সবদিক খতিয়ে দেখে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তের তালিকা তৈরি করে প্রশাসন। পূর্ব মেদিনীপুরে প্রায় ৬০ শতাংশ ভুয়ো আবেদন বাতিলও হয়েছে। অথচ তারপরেও বহু প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি ক্ষতিপূরণের আওতার বাইরে থেকে গিয়েছেন।
দাদনপাত্রবাড়ের কমল বারিক পেশায় নাপিত। ঘরহারা স্বামী-স্ত্রী তাঁবুতে রয়েছেন। তাঁদের কাছে অবশ্য প্রশাসনের লোক এসেছিল। কিন্তু জুটেছে মাত্র ৫ হাজার টাকা অর্থাৎ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির ক্ষতিপূরণ। পাশেই শম্ভু রামের পাকা ইটের বাড়ি মাটিতে মিশেছে। তবে ‘দুয়ারে ত্রাণে’ আবেদন করে টাকা পাননি তিনিও। অথচ পাশে প্রায় অক্ষত বাড়ির মালিক ক্ষতিপূরণে ৫ হাজার টাকা পেয়েছেন বলে অভিযোগ।
অরকবনিয়ার মানোয়ারা বিবি, জৈতুন বিবিদের মতো আরও অনেকেই ক্ষতিপূরণ পাননি। অনেকে আবার বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরেও ২০ হাজারের বদলে পেয়েছেন মাত্র ৫ হাজার টাকা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রশাসনিক তদন্ত হয়নি বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যে ক্ষতিপূরণ বিলির প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। ফলে, বঞ্চিত ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষুব্ধ।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাঝি বলছেন, ‘‘দু-একজন ক্ষতিগ্রস্ত তদন্তের সময় যদি কোনওভাবে বাদ পড়ে গিয়ে থাকেন স্থানীয় বিডিও-কে দেখতে বলব।’’ ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। বিজেপির কাঁথি জেলা সভাপতি অনুপ চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যে কেন্দ্রীয় সরকার সাড়ে
ছ’শো কোটি টাকা রাজ্যকে দিয়েছিল। এখন ক্ষতিপূরণ বিলিতে দুর্নীতি করছে তৃণমূল।’’ স্থানীয় বিধায়ক
তথা রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির যদিও দাবি, ‘‘দুর্নীতির প্রশ্নই ওঠে না। যদি কেউ বাদ পড়ে থাকেন তবে আমরাও খোঁজ নিয়ে প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement