সাংবাদিক দেবমাল্য বাগচীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে খড়্গপুর লোকাল থানার পাশে প্রতিবাদ নাগরিক সমাজের। —নিজস্ব চিত্র।
আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক দেবমাল্য বাগচীর গ্রেফতারের প্রতিবাদে শনিবারও কর্মসূচি হয়েছে তাঁর নিজের শহর খড়্গপুর-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় এবং অন্য জেলাতেও। তাঁর মুক্তির দাবিতে সরব হয়েছে নানা সংগঠন, আদিবাসী সংগঠনও।
তফসিলি জাতি ও জনজাতির উপরে অত্যাচার প্রতিরোধের আইনে দেবমাল্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই ধারা প্রয়োগের নিন্দা করেছে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ। রাজ্য সংগঠনের কার্যনির্বাহী সভাপতি তেজকুমার টোপ্পো বলেন, ‘‘এই ধারা আমাদের উপরে অত্যাচার কমানোর লক্ষ্যে তৈরি হলেও আমরা যখন এই ধারা প্রয়োগের দাবি তুলি, তখন তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয় না। অথচ পুলিশ নিজের ইচ্ছায় এই ধারার অপপ্রয়োগ করে।’’ এ ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনই হয়েছে বলে দাবি তেজকুমারের। তবে পুলিশের বক্তব্য, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই এই গ্রেফতার।
শনিবার পশ্চিম মেদিনীপুর প্রেস ক্লাবের সভায় ঠিক হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রতিবাদপত্র পাঠানো হবে। এক বিবৃতিতে ক্লাব জানিয়েছে, এক জন প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক গ্রেফতারের ঘটনা শুধু নিন্দনীয়ই নয়, চিন্তারও বিষয়। এ দিন বিকেলে খড়্গপুরের ইন্দায় প্রতিবাদসভা করেছে খড়্গপুর নাগরিক সমাজ। তারাও অবিলম্বে সাংবাদিকের মুক্তির দাবি জানিয়েছে। ঘটনায় সরব হয়েছে মেদিনীপুর জেলা সংবাদপত্র সমিতিও। সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ দাস বলেন, ‘‘এটা গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের উপরে আক্রমণ। সাংবাদিকের কণ্ঠরোধের অপচেষ্টা।’’
অন্য জেলাতেও প্রতিবাদ অব্যাহত। এই গ্রেফতারের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে নদিয়ার কল্যাণী প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে ই-মেল করা হয়। এ দিন প্রতিবাদ মিছিল করেছে প্রেস ক্লাব অব বহরমপুর। জেলার বিভিন্ন এলাকার সাংবাদিকদের পাশাপাশি বহরমপুর শহরের বেশ কয়েক জন সমাজকর্মী এই প্রতিবাদ মিছিলে পা মেলান। কাল, সোমবার জেলাশাসক ও পুলিশের কাছে স্মারকলিপিও দেবেন তাঁরা।
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও প্রতিবাদ হচ্ছে। কোচবিহার সদর মহকুমা প্রেস ক্লাবের তরফে শনিবার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে স্মারকলিপি পাঠানো হয়। ওই ক্লাবের সম্পাদক সুমনকল্যাণ ভদ্র বলেন, ‘‘ওই সাংবাদিকের দ্রুত মুক্তির আর্জি জানানো হয়েছে। সবাইকে সংবাদমাধ্যমের কাজের স্বাধীনতা রক্ষায় পাশে থাকতে অনুরোধ করছি।’’ আলিপুরদুয়ার টাউন প্রেস ক্লাবের সম্পাদক অম্লানজ্যোতি ঘোষ বিবৃতি দিয়ে জানান, প্রতিবাদ জোরদার করা হবে।
দেবমাল্যের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ইউটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন। একই দাবিতে মানবাধিকার সংগঠন ‘সিপিডিআরএস’-এর দুর্গাপুর শাখার তরফে এ দিন বেনাচিতিতে বিক্ষোভ দেখানো হয়। সংগঠনের রাজ্য কমিটির সহ-সম্পাদক সুচেতা কুণ্ডু বলেন, ‘‘জনজাতির অধিকার, আইনি সুরক্ষা এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে আমরা অবহিত এবং শ্রদ্ধাশীল।’’ এই গ্রেফতারের পিছনে পুলিশি চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতিও। সমিতির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর বলেন, ‘‘নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। পশ্চিমবঙ্গকে যোগী-রাজের উত্তরপ্রদেশ হতে দেওয়া যাবে না।’’
দেবমাল্যের গ্রেফতারি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় আরও একটি আঘাত বলে উল্লেখ করে এ দিন বিবৃতি দেওয়া হয়েছে রাজ্য সিপিএমের এক্স হ্যান্ডলে। সেখানে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য তুলে ধরে লেখা হয়েছে, ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বদলে পুলিশ-প্রশাসন ব্যস্ত, কী ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর নজরে ভাল সাজা যায়! সেই কারণেই অপরাধীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, সাধারণ নাগরিক ও সাংবাদিকদের হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে।’