Cyclone Yaas

শিবিরেই বহু মানুষ, খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা

শিবিরগুলিতে কোথাও প্রশাসন, কোথাও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে রান্না করে খাওয়ানো হচ্ছে। বিলি করা হচ্ছে শুকনো খাবারও।

Advertisement

সমীরণ দাস 

কুলতলি শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২১ ০৬:০৮
Share:

n স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বিলি করা শুকনো খাবার হাতে এক শিশু। কুলতলির পশ্চিম দেবীপুরে। শনিবার। নিজস্ব চিত্র

জল কিছুটা নেমেছে শুনে শুক্রবার ত্রাণ শিবির থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন কুলতলির দেউলবাড়ির বাসিন্দা জামিনা বিবি। কিন্তু জল-কাদায় ভরা মাটির বাড়িতে থাকতে না পেরে শনিবারই ফিরে এসেছেন শিবিরে। শনিবার স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের শিবিরে দাঁড়িয়ে জামিনা বলেন, “জলে নেমেছে শুনে বাড়ি গিয়েছিলাম। কিন্তু ওই বাড়িতে থাকা যায় না। চারদিকে জল-কাদা। জিনিসপত্র সব ভেসে গিয়েছে। রাতটুকু কোনও রকমে কাটিয়ে তাই আবার শিবিরে চলে এলাম। জানি না কবে বাড়ি ফিরতে পারব।”

Advertisement

ঝড়ের আগেই উপকূল এলাকার বাসিন্দাদের একাংশকে তুলে আনা হয়েছিল ত্রাণ শিবিরে। গত তিন দিনেও জল নামেনি অনেক গ্রাম থেকে। ফলে ঘরে ফেরার উপায় নেই। তাই এখনও ত্রাণ শিবিরেই রয়েছেন বহু মানুষ। জামিনার মতো কেউ কেউ ভিটের টানে বাড়িতে ফিরছেন। কিন্তু পরিস্থিতি দেখে বাধ্য হচ্ছেন ফের শিবিরে ফিরতে। কেউ কেউ অবশ্য জল-কাদার মধ্যেই থেকে যাচ্ছেন প্রাণ হাতে নিয়ে। কেউ আবার বাড়ির আশেপাশে কোনও পড়শির পাকা বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন।

শিবিরগুলিতে কোথাও প্রশাসন, কোথাও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে রান্না করে খাওয়ানো হচ্ছে। বিলি করা হচ্ছে শুকনো খাবারও। তাই খেয়েই আপাতত দিন কাটছে ঘরহারা মানুষগুলোর। তবে খাবার নিয়ে দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না। এ দিন দুপুরের খাবারের জন্য বছর তিনেকের মেয়েকে নিয়ে কুলতলির পশ্চিম দেবীপুরের এক ত্রাণ শিবিরে লাইন দিয়েছিলেন জ্যোৎস্না জানা। এমন সময় খবর এল, কিছুটা দূরে এক সংস্থার তরফে শুকনো খাবার বিলি হচ্ছে। শুনে কোলের মেয়েকে নিয়ে আগে সে দিকেই ছুটলেন বছর ত্রিশের মহিলা। শুকনো খাবারের প্যাকেট হাতে ফিরে এসে থালায় ভাত
নিয়ে খাওয়াতে বসলেন মেয়েকে। নিজেও খেলেন।

Advertisement

জ্যোৎস্নার কথায়, “বাড়িটা এখনও কোমর জলের তলায়। পড়শির বাড়িতে আছি। যা পরিস্থিতি কবে ফিরতে পারব জানি না। এখমে রান্না করা খাবার পাচ্ছি। কিন্তু কবে পাই, না পাই ঠিক নেই। তাই বাচ্চাদের কথা ভেবে যতটা পারছি শুকনো খাবার মজুত করে রাখছি।”

পশ্চিম দেবীপুরের আদিবাসী শিশু শিক্ষাকেন্দ্রে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। আশেপাশের বেশ কয়েকটা পাড়ার বানভাসি মানুষদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে সেখানে। প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মিলে দুপুরে রান্না করা খাবারের ব্যবস্থাও করেছে। দুপুরে সেই শিবিরে খেতে বসে বছর পঞ্চাশের স্বপন জানা বলেন, “দুপুরটা এখানে রান্না হচ্ছে। রাতে শুকনো খাবার দিচ্ছে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? বাড়িটা জলে ডুবে। জমি-পুকুর সব তো জলের তলায়।”

প্রশাসন অবশ্য বারবারই পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছে। এ দিনও কুলতলির বানভাসি এলাকাগুলিতে ঘোরেন স্থানীয় বিধায়ক গণেশ মণ্ডল। তিনি বলেন, “শুধু কুলতলি ব্লকেই প্রায় পঁচিশ হাজার মানুষ বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরগুলিতে আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন। আমরা রোজ প্রায় ত্রিশ কুইন্টাল চাল বিভিন্ন এলাকাগুলিতে পাঠাচ্ছি। কমিউনিটি কিচেন করে মানুষকে খাওয়ানো হচ্ছে। আপাতত এভাবেই চলবে।” পশ্চিম দেবীপুরেই এ দিন শুকনো খাবার বিলি করে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সংস্থার তরফে ঝুম্পা ঘোষ বলেন, “৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিলি করা হয়েছে।” এই ত্রাণটুকু সম্বল করেই এখন বেঁচে রয়েছেন সুন্দরবনের দুর্গতরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement