সার্চ লাইট জ্বেলে শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। ভিড় জমিয়েছেন প্রচুর সাধারণ মানুষ। —নিজস্ব চিত্র
মালদহের মানিকচক ঘাটে বার্জ উল্টে পর পর আটটি লরি গিয়ে পড়ল গঙ্গায়। এই দুর্ঘটনায় নিখোঁজ অন্তত ২০ জন। সোমবার সন্ধ্যায় এই দুর্ঘটনার খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই মানিকচক ঘাটে পৌঁঁছয় পুলিশ ও উদ্ধারকারী দল। ঘটনাস্থলে যান মালদহের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া এবং জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র-সহ প্রশাসনিক আধিকারিকরা। রাতে সার্চ লাইট জ্বালিয়ে চলছে উদ্ধারকাজ। কত জন নিখোঁজ সে বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘আমরা গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছি। ’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, ঝাড়খণ্ডের রাজমহল ঘাট থেকে পাথর বোঝাই ১০টি লরি মালদহের মানিকচক ঘাটে এসে ভিড়েছিল। বার্জ থেকে এক এক করে লরি নামছিল। একটি লরি নেমে নিরাপদে নদীর ঘাট থেকে উপরে উঠে আসে। কিন্তু দ্বিতীয় লরিটি নামার সময়েই বিপত্তি ঘটে। বার্জের উপর থাকা লরিগুলির ভারে এক দিকে কাত হয়ে উল্টে যায় বার্জটি। ফলে ৮টি লরিই ডুবে যায় জলে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই লরিগুলির চালক-খালাসি মিলিয়ে ১৫-১৬ জন এবং আরও কয়েকজন যাত্রী মিলিয়ে মোট ২০ জনের মতো নিখোঁজের আশঙ্কা। যদিও জেলা প্রশাসনের তরফে সরকারি ভাবে এখনও নিখোঁজের সংখ্যা জানানো হয়নি। প্রাথমিক ভাবে অনুমান, অতিরিক্ত ভার বহনের জন্য দুর্ঘটনা হতে পারে।
অন্য দিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সময় ওই লরিতে থাকা অনেকেই গঙ্গায় পড়ে যান। তবে তাঁদের মধ্যে কয়েক জন সাঁতরে উপরে উঠেছেন। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চালাতে নদীর ধারে সার্চ লাইট লাগিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছেন উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা। ভোরে আরও জোরদার তল্লাশি শুরু হবে বলে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সূত্রে খবর। তোলার চেষ্টা করা হবে জলে ডুবে যাওয়া লরিগুলিও।
দুর্ঘটনার পর ঘাটে ভিড় জমিয়েছেন প্রচুর মানুষ। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে মালদহেই ছিলেন সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী। খবর পেয়ে তিনি-সহ জেলা সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব ঘটনাস্থলে যান।
আরও পড়ুন: আলু-পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেন্দ্র কৃষি আইন বদলানোয়, মোদীকে তোপ মমতার
আরও পড়ুন: কাজ সেরে ফেরার পথে কোচবিহারে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত করোনাযোদ্ধা-সহ ২
ঝাড়খণ্ড থেকে সঙ্গে মানিকচক ঘাটের মধ্যে বার্জে (স্থানীয়দের কাছে লঞ্চ বলেই বেশি পরিচিত) করে লরি চলাচল এখানকার পরিচিত দৃশ্য। এক একটি বার্জে ১০ থেকে ১২টি লরি পারাপার করা হয়। সড়কপথে অনেক ঘুরে আসতে হয়। পাহাড়ি পথ বলে নিরাপত্তার সমস্যাও রয়েছে। সেই কারণে লরি চালকরা এই পথই বেছে নেন। অনেকে গাড়ি নিয়েও এই জলপথ ব্যবহার করেন। যানবাহনের পাশাপাশি যাত্রীরাও পারাপার করেন এই বার্জগুলিতে। দু’টি ঘাটই নিয়ন্ত্রণ ঝাড়খণ্ড সরকার। ঘাটের বরাতও পড়শি রাজ্য থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয়। কিন্তু বার্জগুলিতে ক্ষমতার তুলনায় অতিরিক্ত লরি বা পণ্য় পরিবহণ হচ্ছে কি না, সে সব ঠিকমতো নজরদারি হয় না বলে অভিযোগ। এমনকি, যাত্রী বা বার্জ কর্মীদের জন্য লাইফ জ্যাকেট-সহ জীবনরক্ষার সামগ্রীরও সঙ্কট রয়েছে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের।