কাশ্মীর থেকে পরিজনদের ঘরে ফেরার অপেক্ষায় বাহালনগরের একটি পরিবার। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
কাজে গিয়ে কাশ্মীরে বসত গড়েছেন বাহালনগরের মেহেবুব শেখ। টানা ২৪ বছর ধরে ঘর ভাড়া নিয়ে বাস করছেন সস্ত্রীক। দুই মেয়ের জন্মও সেখানে। সেখানকার স্কুলেই লেখাপড়া করছে তারা। বাড়ির নীচেই দর্জির দোকান, রমরমা ব্যবসা গড়ে তুলেছেন মেহেবুব। দাদাকে দেখেই ভাই ইসমাইলেরও কাশ্মীরে যাতায়াত। এমব্রয়ডারির কাজ করেন সেখানে। এ বারে গিয়েছেন গত ১ মার্চ। ছোট ভাই তৈয়বেরও কাশ্মীরে যাতায়াত বছর পনেরো আগে থেকে। পেশায় রাজমিস্ত্রি। এ বারে ১৪ বছরের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন বকরিদের আগে।
মেহেবুব ব্যক্তিগত কাজে বাহালনগরের বাড়িতে ফিরেছেন মঙ্গলবার সকালে। সে দিন রাতেই কাশ্মীরের আপেল বাগানে কাজে যাওয়া পাঁচ শ্রমিকের প্রাণ যায় জঙ্গিহানায়। মেহবুবের বাহালনগরের বাড়িতে রয়েছেন ৮২ বছরের বৃদ্ধ বাবা শাহজামাল শেখ। রয়েছেন অন্য ভাইদের স্ত্রী’রা। কাশ্মীরে ছেলের কাছে গিয়ে বার কয়েক ঘুরেও এসেছেন শাহজামাল। বলছেন, ‘‘চোখ জুড়িয়ে যায়, এত সুন্দর।’’
মেহেবুব থাকেন শ্রীনগরে, কাতরাসু সেখান থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে। তবু মেহেবুব যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না এ ভাবে কোনও মেহমানে’র উপর জঙ্গিহানা হতে পারে কাশ্মীরে। বলছেন, “কাশ্মীর নিয়ে একটা সমস্যা আছে ঠিকই, কিন্তু এত দিন আছি কখনও নিরাপত্তার অভাব বোধ করিনি। বাঙালি ব্যবসায়ী বলে কখনও হুমকির মুখেও পড়তে হয়নি। আমিই দুই ভাইকে কাশ্মীরে যেতে অভয় দিয়েছি। তাদের এক জন বারামুলায় থাকে ছেলেকে নিয়ে। দুই ভাইয়ের স্ত্রী ও অন্য ছেলে মেয়েরা থাকে বাহালনগরেই। আমিও স্ত্রী, মেয়েদের কাশ্মীরেই রেখে ক’দিন আগে গ্রামে এসেছি। ফিরে যাব ৪ নভেম্বর।”
ইসমাইল শেখের স্ত্রী নাইরা বিবি বলছেন, “সেই মার্চ মাসে গিয়েছিলাম। এমব্রয়ডারির ভাল কাজ জানে। দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া মেয়ের বিয়ের ঠিক হয়েছে। জানিয়েছে, কিছু বাড়তি টাকা পয়সা নিয়ে ডিসেম্বরে ফিরবে বাহালনগরে। বিয়ে হয়ে গেলে আবার ফিরে যাবে। রোজই তো ফোনে কথা হয়, কই তেমন গন্ডগোল তো শুনিনি।’’ ছোট ছেলে তৈয়ব শেখের স্ত্রী সোনালী দু’বছরের মেয়েকে নিয়ে পাশের গ্রাম বোখারায় বাবার বাড়ি গিয়েছেন ক’দিনের জন্য। বাবা শাহজামাল বলছেন, “তৈয়বও বারামুলাতেই থাকে ১৪ বছরের ছেলেকে নিয়ে। কখনও কোনও বিপদে পড়তে হয়নি তাকে। আশঙ্কা থাকলে কি নিজের ছেলেকে নিয়ে যায়? কাশ্মীরে কাজ আছে , ভাল আয় আছে, তাই সেখানেই বছরের বেশিরভাগ সময়টাই কাটে ওদের।”
তাঁর কথায়, “জঙ্গিদের হানা শুধু তো কাশ্মীরেই ঘটছে না, মুম্বই, দিল্লি, অসম সর্বত্রই রয়েছে। কাজের জন্য তাকে বাধা দেব কী করে!’’