বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটে রাজ্যে তাঁদের দলের আসন-সংখ্যা বাড়লে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সময়ের আগেই পড়ে যাবে, এমন দাবি কিছু দিন ধরেই করে আসছেন বিজেপির নেতারা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব, সকলেই আছেন সেই তালিকায়। এ বার পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, ‘‘এই সরকারের ৮০% লোক আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।’’ শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য শুভেন্দুর এমন দাবি পত্রপাঠ নস্যাৎ করে দিয়েছে। কিন্তু মহারাষ্ট্রে এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের ভাইপো অজিত পওয়ারের শিবির বদলের জেরে নানা রাজ্যেই নানা জল্পনা ভেসে উঠতে শুরু করেছে। শুভেন্দুর মন্তব্য বঙ্গ রাজনীতিতেও সেই জল্পনা নতুন করে উস্কে দিয়েছে।
নদিয়ার চাকদহে মঙ্গলবার পঞ্চায়েতের প্রচারে গিয়ে ফের তৃণমূলের বিরুদ্ধে সকলকে জোট বাঁধার ডাক দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। বলেছেন ‘মানুষের জোটে’র কথা। সেই সূত্রেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘এই সরকারের ৮০% লোক আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।’’
যার জবাবে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পাল্টা দাবি করছেন, ‘‘বিজেপিরই ৯৯% নেতা-কর্মী শুভেন্দুকে পছন্দ করেন না! তাঁদের সঙ্গে ওঁর কোনও যোগাযোগও নেই। তৃণমূল জিতবে, পঞ্চায়েত গড়বে। মানুষ সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। যাঁরা হেরে যাবে, তাঁদের সঙ্গে মানুষ যোগাযোগ রাখতে যাবেন কেন?’’
বিজেপি শিবিরের আগাম অঙ্ক, পঞ্চায়েতে সুষ্ঠু ভোট হলে শাসক দল ভাল রকম ধাক্কা খাবে। তার প্রভাব পরের বছর লোকসভা নির্বাচনেও পড়বে। এবং সেই সূত্রেই শাসক শিবির থেকে অনেকে রং বদলাবেন! এই অঙ্ক আদৌ মিলবে কি না, তার উত্তর ভবিষ্যতের গর্ভে। কিন্তু নানা জনের নানা মন্তব্যে জল্পনার ডালপালা ছড়াচ্ছে!
মহারাষ্ট্রের মতো ঘটনা তাঁদের রাজ্যেও ঘটতে পারে বলে ইতিমধ্যে মুখ খুলেছেন একাধিক দলের নেতারা। বিহারে বিজেপির নেতা সুশীল মোদী মন্তব্য করেছেন, তাঁদের রাজ্যেও মহারাষ্ট্রের পুনরাবৃত্তি হবে! জেডিএস নেতা এইচ ডি কুমারস্বামী প্রশ্ন তুলেছেন, কর্নাটকে কে হবেন অজিত পওয়ার? বাংলার নেতারাও চুপ করে নেই। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী আগেই মন্তব্য করেছিলেন, বাংলায় ‘ভাইপো’ কখন কী খেলা দেখাবেন, নজর রাখতে হবে! মহারাষ্ট্র সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে এ দিন আলিমুদ্দিনে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজেপি নেতারা যাঁদের বিরুদ্ধে এত দুর্নীতির অভিযোগ করতেন, তাঁদেরই দলে নিয়ে নিলেন! মহারাষ্টেরে সেচ কেলেঙ্কারির অভিযোগ তোলা হত। বাংলাতেও ২৩ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির কথা বলেছেন মোদী, যদিও অঙ্কটা অনেক বেশি। কিন্তু যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কথা বলছেন, তাঁদেরই নিয়ে নেবেন না— কে বলতে পারে!’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘রাজীব গান্ধীর ভাইপো বিজেপিতে গিয়েছিলেন। শরদ পওয়ারের ভাইপো গেলেন। ভাইপো থেকে সাবধান!’’ মহারাষ্ট্রের উদাহরণ টেনে পরে পানাগড়ে প্রচারে গিয়েও সেলিমের দাবি, “ভাইপো (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) নবযাত্রা করছেন, তৃণমূলের জন্য নাকি বিজেপির জন্য করছেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। পরে ভাইপো যে বিজেপিতে যোগ দেবেন না, তা বলা অসম্ভব!’’
তৃণমূলের কুণালের পাল্টা মন্তব্য, ‘‘সেলিম ভাইপো-আতঙ্কে ভুগছেন! ছেলের বয়সী তরুণ অভিষেক, তাঁকে শয়নে-স্বপনে-জাগরণে দেখছেন। তাই আতঙ্ক থেকে এই সব বলছেন।’’