প্রতীকী ছবি।
সব ছাত্রছাত্রীকে করোনা ভ্যাকসিন দিয়ে তবেই রাজ্য সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার দিকে এগোবে বলে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়ে দেওয়ার পরেও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের টিকাকরণে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রথমত, বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষেরা জানাচ্ছেন, টিকার ব্যাপারে অনেক পড়ুয়ার উৎসাহ থাকলেও অনীহা রয়েছে বহু ছাত্রছাত্রীর পরিবারের। সেই সব ক্ষেত্রে কলেজকে অতিরিক্ত চেষ্টা চালাতে হচ্ছে। দ্বিতীয় সমস্যা, কলেজে নবাগতদের অনেকেরই বয়স ১৮ বছর হয়নি। তৃতীয়ত, ভর্তি-প্রক্রিয়া এখনও চলতে থাকায় নতুন অনেক পড়ুয়াকেই টিকাকরণ প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা যাচ্ছে না।
লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের অধ্যক্ষা শিউলি সরকার জানান, সদ্য ভর্তি হওয়া পড়ুয়াদের ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়ে তাঁরা উদ্যোগী হতে পারেননি। কলেজের অধিকাংশ ছাত্রীই অবশ্য জানান, হয় তাঁদের দু'টি ডোজ় নেওয়া হয়ে গিয়েছে বা বাড়ির উদ্যোগেই তাঁরা টিকা নিচ্ছেন। অন্তত ৭০টি ছাত্রীর পরিবার টিকাকরণে রাজি ছিল না। শিক্ষিকারা উদ্যোগী হয়ে সেই অভিভাবকদের বুঝিয়েছেন এবং ওই ছাত্রীরা ভ্যাকসিনও নিয়েছেন।
তাঁর প্রতিষ্ঠানেরও কিছু পড়ুয়া প্রথমে ভ্যাকসিন নিতে চাননি বলে জানান মহেশতলা কলেজের অধ্যক্ষা রুম্পা দাস। শিক্ষক-শিক্ষিকা ও পড়ুয়ারা দলবদ্ধ ভাবে অনিচ্ছুক পড়ুয়াদের অভিভাবকদের বোঝানোর পরে সেই পড়ুয়ারা টিকা নিতে রাজি হয়েছেন। নবাগত-সহ কলেজের ১২০০ পড়ুয়ার মধ্যে ৩৫০ জন টিকা নেবেন। অন্যদের বেশির ভাগেরই টিকা হয়ে গিয়েছে বা প্রথম ডোজ়ের পরে দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার সময় হয়নি। ঠিক হয়েছে, সময় হলে মহেশতলা পুরসভার উদ্যোগে দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া হবে পড়ুয়াদের।
কাকদ্বীপ সুন্দরবন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ শুভঙ্কর চক্রবর্তী জানান, তাঁর কলেজের হাজার দুয়েক পড়ুয়া টিকা নিতে রাজি। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৩৫০ জন সদ্য ভর্তি হয়েছেন। উচ্চশিক্ষা দফতর টিকার বিষয়টি জানানোর পরে তিনি অনলাইনে দু'বার পড়ুয়াদের বুঝিয়েছেন, ভ্যাকসিন নেওয়া কতটা জরুরি। নবাগতদের কাছে গুগ্ল ফর্ম পাঠিয়ে তা পূরণ করতে বলা হয়েছে। অধ্যক্ষের হিসেব, এ-পর্যন্ত প্রথম সিমেস্টারে ভর্তি হওয়া ১৯৭৮ জনের মধ্যে ৩৫০ জন টিকা নিতে আসবেন বলে জানিয়েছেন। নবাগতদের অনেকের বয়স ১৮ না-হওয়ায় টিকা আটকে গিয়েছে বলে জানান অধ্যক্ষ।
ক্যানিং বঙ্কিম সর্দার কলেজের অধ্যক্ষ তিলক চট্টোপাধ্যায় জানান, নবাগতদের মধ্যে যাঁদের অনার্স আছে, শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভ্যাকসিন নিতে বলেছেন। নতুনদের মধ্যে টিকা নিতে রাজি হওয়া পড়ুয়ার সংখ্যা বেশ আশাপ্রদ বলে মন্তব্য করেন অধ্যক্ষ। পুরনোদের মধ্যে এ-পর্যন্ত ৫২ শতাংশ পড়ুয়া টিকা নিতে রাজি হয়েছেন। বাকিদের মধ্যে দু'টি ডোজ় নিয়েছেন অনেকেই। অনেকের দ্বিতীয় ডোজ়ের সময় হয়নি। তিলকবাবু বলেন, "সকলে যে ভ্যাকসিন নিতে প্রথম রাজি ছিলেন, তা নয়। রবীন্দ্রনাথ কী ভাবে প্লেগ মোকাবিলার জন্য সকলকে আহ্বান জানিয়েছিলেন, সেটা রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে বলেছিলাম। একই ভাবে করোনা অতিমারিরও মোকাবিলা করতে হবে পড়ুয়াদের এবং তার জন্য নিতে হবে ভ্যাকসিন। কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এই ভাবেই শুরু করেছিলাম প্রচার।"
গড়িয়া দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজের অধ্যক্ষ সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, পুরনো ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশই ভ্যাকসিন নিতে আসছেন। নবাগতদের মধ্যে ৪০০ জনের বয়স ১৮ বছরের নীচে। বাকিদের ভ্যাকসিনের জন্য ফর্ম পূরণ করতে দেওয়া হয়েছে। সরকারকে জানিয়ে তাঁদেরও টিকাকরণের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি জানান, ৩৯ জন পড়ুয়া কোভ্যাক্সিনের প্রথম ডোজ় নিয়েছেন। রাজ্য কোভিশিল্ড দেওয়ার ব্যবস্থা করায় ওই সব পড়ুয়াকে দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া যাচ্ছে না।