Teesta River

নির্বিচার নির্মাণেই ভয়াল তিস্তা, দাবি

বর্ষার মরসুমে বরাবর ভয়াল, খরস্রোতা তিস্তা। কিন্তু গত বছর থেকে তিস্তার জলস্ফীতিতে ধ্বংসের পরিমাণ বেড়েই চলেছে সিকিম থেকে পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং জেলার একাংশে।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী , সৌমিত্র কুণ্ডু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২৪ ০৭:১৫
Share:

তিস্তা নদী। —ফাইল চিত্র।

তিস্তাপারের ‘বৃত্তান্ত’ কি ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে, প্রশ্নটা উঠেছে আগে। এখন আরও বেশি করে উঠছে। বিশেষ করে, গত অক্টোবরের বিপর্যয়ের পর থেকে। তবে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, প্রকৃতির কারণে তিস্তা এমনিই বদলাচ্ছে, তার উপরে একে ঘিরে মানুষের ‘কার্যকলাপ’ তিস্তার পারের বৃত্তান্ত দ্রুতই পাল্টে দিতে পারে।

Advertisement

বর্ষার মরসুমে বরাবর ভয়াল, খরস্রোতা তিস্তা। কিন্তু গত বছর থেকে তিস্তার জলস্ফীতিতে ধ্বংসের পরিমাণ বেড়েই চলেছে সিকিম থেকে পশ্চিমবঙ্গের কালিম্পং জেলার একাংশে। প্রভাব পড়ছে দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলায়। গত অক্টোবরে লোনাক হ্রদের বিস্ফোরণ, হড়পা বানে সিকিমে বিধ্বংসী পরিস্থিতি হয়। এ বার জুনের টানা বৃষ্টিতে ফের সিকিম থেকে কালিম্পং অবধি তিস্তা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তিস্তার নদীখাত দিনের পর দিন উঁচু হয়ে যাচ্ছে। দফায় দফায় বালি, পাথর, নুড়ি থেকে বড় পাথর নদীর উপরিভাগ থেকে নেমে আসছে। বৃষ্টি, হড়পাবান বা কোনও জলস্ফীতি হলে আছড়ে পড়ছে নদীর দু’পাশে। রাস্তা, সেতু, জঙ্গল, পাহাড় চলে যাচ্ছে তিস্তাগর্ভে।

উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের প্রধান দীপক মণ্ডল বলেন “সব নদীর একটা বিপজ্জনক এলাকা থাকে। তিস্তার সেই জায়গা ক্রমেই দখল হয়ে জনবসতি হচ্ছে। পাহাড় থেকে সমতল, তিস্তাখাতের একাংশ দখল হয়ে যাচ্ছে। ফলে নদীর জল বাড়লেই ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে।” সিকিম কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূূগোল বিভাগের প্রধান সোহেল ফিরদৌসও বলেন, “রংপোর একটি এলাকায় গত বছর তিস্তার জলে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তা আসলে নদীখাতের অংশ। সেখানে জনবসতি বেড়েছে। অবৈধ নির্মাণ হয়েছে। এ বার বিপর্যয়ের শঙ্কা হচ্ছে।”

Advertisement

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, তিস্তার সংরক্ষিত এলাকা, নদীখাত থেকে শুরু করে দু’পারের একাধিক কর্মকাণ্ড এলাকাকে ‘স্পর্শকাতর’ করে তুলেছে। তিস্তাকে পাশে রেখে জাতীয় সড়কে সারা বছর পাহাড় কাটার কাজ চলছে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে সিকিম অবধি ৪৭টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি হয়েছে। সিকিমে ১৭০ এবং পশ্চিমবঙ্গে ১২৩ কিলোমিটার তিস্তা প্রবাহিত রয়েছে। সেখানে একের পর এক বিদ্যুৎ প্রকল্প, নদীর গতিপথ পরিবর্তন, জলাধারের জল আটকের জেরে নদীর স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ। সেবক-রংপো রেল প্রকল্পে ১৪টি বিরাট সুড়ঙ্গ তৈরি হয়েছে। অভিযোগ, সেখানে ডিনামাইট দিয়ে পাহাড়ে সুড়ঙ্গ করায় এলাকা ভঙ্গুর হয়ে। তাতেও প্রভাব পড়েছে তিস্তায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এক দিনে এই পরিস্থিতি হয়নি। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে ব্যারাজের আগে জল ধরে রাখা হচ্ছে। সেখানে পলি জমে ক্রমেই তিস্তার খাতের গভীরতা কমছে। সেই পলি কার্যত পরিষ্কারই হয় না। গত বছর অক্টোবরে লোনাক হ্রদের জলোচ্ছ্বাসের বিপর্যয়ে বিপুল পলি ও অন্য সামগ্রী তিস্তার খাতে জমা হয়েছে। পাহাড় থেকে সমতল বিভিন্ন ক্ষেত্রেই তা জমেছে। নদীখাত উঁচু হয়ে উঠে আসায় নদীর জল ধারণ ক্ষমতা আরও কমেছে।

আরও দু’টি বিষয় শঙ্কা বাড়িয়েছে। গাছ থাকলে বাড়ে মাটির জলধারণ ক্ষমতা। পাহাড়ে সবুজ কমায় মাটির সেই ক্ষমতা কমছে। বৃষ্টি হলে দ্রুত আশেপাশের বড় এলাকার জল চলে আসছে তিস্তার খাতে। দীপক মণ্ডল বলেন, “সেবক-রংপো রেলপথও এই অঞ্চলে কাঙ্ক্ষিত নয়। প্রকল্পের নির্মাণ কাজের প্রচুর সামগ্রী নদীখাতে পড়ছে। কোথাও নদীর ধার ঘেঁষে সে সব কংক্রিট স্তূপাকারে জমা করা হয়েছে।”

পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেন, “আমরাই তিস্তার উপরে গিয়ে পড়েছি। অবৈধ নির্মাণ, যথেচ্ছ জলাধার দিয়ে তিস্তাকে বাঁধতে চাইছি। সেই বাঁধন ছিঁড়ে তিস্তা বার হবে। এখন সাবধান না হলে ক্ষতি হতে পারে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement