জাহাজ মন্ত্রকের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবীয়। —ফাইল চিত্র।
কলকাতা বন্দরের ১৫০ বছর পূ্র্তির সূচনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে এক মঞ্চে থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাল, রবিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বেলা ১১টা থেকে দু’ঘণ্টার সেই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী রাজ্যের জন্য বন্দরকেন্দ্রিক এক গুচ্ছ প্রকল্প ঘোষণা, শিলান্যাস ও উদ্বোধন করবেন বলে শুক্রবার কলকাতায় এক সাংবাদিক বৈঠকে জানান জাহাজ মন্ত্রকের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবীয়।
বাংলার উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকার যে কোনও ক্ষেত্রেই বাধা হয়ে দাঁড়াবে না, তা-ও জানিয়ে দেন জাহাজমন্ত্রী। তিনি জানান, যদি রাজ্য সরকার চায়, তাজপুর বন্দর তারা নিজেরা তৈরি করতে পারে। কেন্দ্র সম্পূর্ণ সাহায্য করবে। আবার কেন্দ্রের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগেও ওই বন্দর নির্মাণে এগিয়ে আসতে পারে রাজ্য। ‘‘কে বন্দর তৈরি করছে, সেটা বড় ব্যাপার নয়। ভারতের আরও একটি বন্দর হবে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ,’’ বলেন মনসুখ।
তাজপুর বন্দর নির্মাণে রাজ্যকে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ কার্যত জাহাজ মন্ত্রকের ঘোষিত অবস্থান থেকে সরে আসা বলেই মনে করছে জাহাজি শিবির। কারণ, রাজ্য যখন তাজপুর বন্দর নিজেরা তৈরি করতে এগিয়েছিল, তাতে আপত্তি তুলেছিল কলকাতা বন্দরই। কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ উদ্যোগের সংস্থা তৈরি করে তা নির্মাণের কথা ভাবা হয়েছিল। সম্প্রতি রাজ্য আবার নিজেরাই তাজপুর বন্দর তৈরি করতে চাইছে। সে-কথা জেনেও জাহাজমন্ত্রীর এ দিনের মন্তব্য আদতে মোদী-মমতা সম্পর্কের নতুন সমীকরণ তৈরির ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন বন্দরকর্তাদের একাংশ।
আরও পড়ুন: টুইট-বোমা! বিজেপির অন্দরের সঙ্ঘাত প্রকাশ্যে মোদীর সফরের আগেই
তাজপুর বন্দর নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে কেন্দ্রের অবস্থান স্পষ্ট করার পরেই নবান্নে গিয়ে মোদীর অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানান মনসুখ। নবান্ন সূত্রের খবর, মমতা ও মনসুখের বৈঠকে গঙ্গাসাগরের সঙ্গে সংযোগ-সেতুর প্রসঙ্গও ওঠে। রাজ্য জানিয়েছে, কেন্দ্র ওই সেতু তৈরি করে দিলে বন্দর প্রকল্পে কেন্দ্রকে শরিক হিসেবে নেওয়া হবে। এ ছাড়া কলকাতায় বন্দরের প্রায় ১৮০০ একর জমিতে উপনগরী, স্কুল, হাসপাতালের মতো সামাজিক পরিকাঠামো তৈরির অনুমতি চায় রাজ্য। পরে রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গেও দেখা করেন মনসুখ। দু’দিন আগে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কফি পানের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল। রবিবার নেতাজি ইন্ডোরের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যপালও উপস্থিত থাকবেন।
মনসুখ জানান, রবিবারের ওই অনুষ্ঠানে বন্দরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের জন্য এলআইসি-র হাতে ৫০০ কোটি টাকার অ্যানুইটির চেক তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এর ফলে এলআইসি-র হাতে মোট ৩৫০০ কোটি টাকা তুলে দেওয়া হচ্ছে। সেই তহবিল থেকেই পেনশনের টাকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া নেতাজি সুভাষ ড্রাই ডকে জাহাজ ভাঙা ও মেরামতির কাজ শুরু করছে কোচি শিপওয়ার্ড। কলকাতা বন্দরের তিন নম্বর বার্থটি যন্ত্রচালিত করে তোলার জন্য ৩৩০ কোটি টাকা ঢালা হচ্ছে। ৮০ কোটি টাকা খরচ করে তরল পণ্যের আরও একটি টার্মিনাল গড়া হবে। জাহাজমন্ত্রী জানান, বন্দরের গঙ্গাতীরের ৩২ একর জমির সৌন্দর্যায়নে ১০০ কোটি টাকা খরচ হবে। হলদিয়া মাল্টিমোডাল টার্মিনাল, বন্দরের ইতিহাস নিয়ে একটি সংগ্রহশালা তৈরি, গঙ্গাবক্ষে তথা ভারত-বাংলাদেশ প্রোটোকল রুটে ক্রুজ জাহাজ চালানোর প্রকল্প নিয়েও রাজ্যে লগ্নি ও কর্মসংস্থানের কথা ভাবছে কেন্দ্রীয় সরকার।