প্রসেনজিৎ মণ্ডল
বাড়ির বাইরে জানলার গ্রিল থেকে ওড়নার ফাঁসে ঝুলছিল যুবকের দেহ। এই অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে মঙ্গলবার দিনভর টানাপড়েন চলল পূর্ব বর্ধমানের কালনার কল্যাণপুরে। যে বাড়ির জানলায় দেহ মেলে, সেই পরিবারের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেছে প্রসেনজিৎ মণ্ডল (২৪) নামে ওই যুবকের পরিবার। তাদের অভিযোগ, প্রসেনজিতের সঙ্গে ওই বাড়ির মেয়ের সম্পর্কে আপত্তি থাকায় তাঁকে খুন করা হয়েছে। এফআইআর নিতে গড়িমসির অভিযোগে থানায় বিক্ষোভ, অভিযুক্তদের ধরার দাবিতে রাস্তা অবরোধে তেতে ওঠে এলাকা।
কল্যাণপুরের শাসপুর- রামকৃষ্ণপল্লি এলাকায় বাড়ি প্রসেনজিতের। পাশের আশ্রমপাড়া এলাকায় একটি কলম তৈরির কারখানায় কাজ করতেন তিনি। তাঁর পরিবারের দাবি, আশ্রমপাড়া এলাকার এক কলেজছাত্রীর সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’ ছিল প্রসেনজিতের। মেয়েটি তাঁদের বাড়িতেও আসতেন। প্রসেনজিতের বাবা তপন মণ্ডল পুলিশে অভিযোগ করেন, সোমবার সন্ধ্যায় ওই তরুণীর বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন জানিয়ে তাঁর ছেলে বাড়ি থেকে বেরোন। রাতে ফেরেননি। এ দিন সকালে তাঁরা ছেলের দেহ মেলার খবর পান। তপনবাবুর অভিযোগ, ‘‘ছেলের সঙ্গে বিয়েতে মত ছিল না মেয়ের বাবা-মায়ের। তাই ওকে খুন করে ঝুলিয়ে দিয়েছে ওরা।’’
প্রসেনজিতের সঙ্গে কোনও সম্পর্কের কথা অবশ্য মানতে চাননি মেয়েটি ও তাঁর পরিজনেরা। তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, প্রসেনজিৎ মেয়েটিকে মাঝেমধ্যে উত্ত্যক্ত করতেন। তরুণীর মায়ের দাবি, এ দিন সকালে তাঁরা মাটি থেকে ছ’ফুট উঁচু জানলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে ঝুলন্ত দেহ দেখতে পেয়ে প্রতিবেশীদের ডাকেন। পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
দেহ উদ্ধারের পরেই রামকৃষ্ণপল্লির কিছু বাসিন্দা মেয়েটির পরিবারের লোকজনকে গ্রেফতারের দাবিতে থানায় বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের আরও অভিযোগ, পুলিশ এফআইআর নিতে গড়িমসি করেছে। দেহ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না-তদন্তে পাঠাতেও দেরি করেছে। দুপুরে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে গাছের গুঁড়ি ফেলে আধ ঘণ্টা এসটিকেকে রোড অবরোধ করা হয়। সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা। পুলিশ এফআইআর নেওয়ার পরে অবরোধ ওঠে।
পরিবারের দাবি, প্রসেনজিতের গলায় যে ওড়নার ফাঁস ছিল, সেটি ওই তরুণীর। যদিও মেয়ের বাড়ির লোক সে কথা মানেননি। অভিযোগ নিতে বা মৃতদেহ ময়না-তদন্তে পাঠাতে গড়িমসির অভিযোগ মানেনি পুলিশও। তাদের বক্তব্য, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট মেলার পরেই মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। আপাতত ওই কলেজছাত্রী ও তাঁর বাবা-মাকে জেরা করা হচ্ছে।