সুরক্ষা ছাড়াই ভাটপাড়ায় মনোজ বর্মা। রবিবার। ফাইল চিত্র
রবিবার ভাটপাড়ায় সার্ভিস রিভলভার উঁচিয়ে উত্তেজিত জনতাকে তাড়া করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। গুলিও চালিয়েছেন শূন্যে। আবার ইটবৃষ্টির সামনে পড়ে দৌড়ে পিছু হঠতে হয়েছে ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মাকে।
এক দিকে যখন মনোজের সাহসিকতার কথা বলছেন এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জ্ঞানবন্ত সিংহ-সহ সহকর্মীরা, তখন অনেকে এ প্রশ্নও তুলছেন, সিনিয়র অফিসার হয়ে মনোজ কী ভাবে কোনও রকম সুরক্ষা ছাড়াই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে গেলেন। মনোজ অবশ্য মেনে নিয়েছেন এই অভিযোগ। সোমবার তিনি বলেন, “আমার গাড়িতে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, ঢাল, হেলমেট-সহ সবই ছিল। কিন্তু তাড়াহুড়োয় নামতে গিয়ে সে সব নেওয়া হয়নি।”
মনোজের নিরাপত্তার কথা যাঁরা বলছেন, তাঁদের মাথায় ঘুরছে আশির দশকের মাঝামাঝি বন্দর এলাকায় নিহত পুলিশ অফিসার বিনোদ মেটার কথা। গোলমালের খবর পেয়ে সে দিন ব্যক্তিগত দেহরক্ষীকে নিয়ে বিনোদ চলে যান গোলমাল রুখতে। পরে তাঁর এবং দেহরক্ষীর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। বিনোদের সে দিনের সিদ্ধান্ত হঠকারী ছিল বলে জানিয়েছিলেন অনেকেই। পুলিশ অফিসারদের অনেকের মনে পড়ছে হেমন্ত কারকরের কথাও। ২৬/১১ মুম্বইয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলা রুখতে গিয়ে গুলিতে প্রাণ হারান মুম্বই পুলিশের দক্ষ অফিসার হেমন্ত। সে সময়ে তাঁর শরীরে যথাযথ সুরক্ষা-কবচ ছিল কিনা সে প্রশ্ন ওঠে। এর আগে ২০০৬ সালে কোনও রকম সুরক্ষা-কবচ ছাড়াই লালগড়ে ঝিটকার জঙ্গলে ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে কৌটো বোমা নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে বিস্ফোরণে মারা যান
দুই পুলিশ।
মনোজের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে দীর্ঘ দিন কাজ করা এক অফিসারের কথায়, “মাথা ঠান্ডা রেখে, কড়া হাতে গোলমাল নিয়ন্ত্রণ করতে ওঁকে আগেও দেখেছি। কিন্তু ভাটপাড়ায় গোলমালের সময়ে স্যার হেলমেট না পরেই গাড়ি থেকে তাড়াহুড়ো করে নেমে যান।” রবিবারের ঘটনায় ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা গিয়েছে, হাত দিয়ে ইট-পাটকেল আটকানোর চেষ্টা করছেন মনোজ। শুধু তিনি নন, বাহিনীর আরও অনেকের মাথাতেও হেলমেট, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ছিল না।
ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক কর্তার মতে, জরুরি পরিস্থিতিতে পুলিশকে তাড়াহুড়ো করেই ‘অ্যাকশনে’ নামতে হয়। কিন্তু হেলমেট, জ্যাকেট, ঢাল ব্যবহার না করার যুক্তি সেটা হতে পারে না। তা ছাড়া অনেক সময়ে পরিকল্পিত ভাবেও পুলিশ কর্তাদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করা হয়। অনেকে সেই ফাঁদে পড়ে বিপদেও পড়েছেন। তাই এ সব ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকাই উচিত ছিল বলে মনে করছেন অনেক পুলিশ কর্তাই।