শুনানির জন্য দিল্লি থেকে কলকাতায় এসেছিলেন এই প্রবীণ দম্পতি। কিন্তু বুধবার হাইকোর্টে কর্মবিরতি চলায় ফিরে যেতে হয় তাঁদের। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
হরেক অজুহাতে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীদের যখন-তখন কর্মবিরতি আন্দোলনে তিনি হতোদ্যম হয়ে পড়েছেন বলে মঙ্গলবার মন্তব্য করেছিলেন প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর। বুধবার তিনি বললেন, আইনজীবীদের কর্মবিরতির আন্দোলনে বিচারপ্রার্থীদের স্বার্থ যে-ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে, সেটা তাঁর কাছে যন্ত্রণাদায়ক এবং অস্বস্তিকর।
গত অগস্টে এই পদে যোগ দিয়েই প্রধান বিচারপতি চেল্লুর কৌঁসুলিদের অনুরোধ করেছিলেন, বিচারপ্রার্থীদের স্বার্থের কথা ভেবে তাঁরা যেন হুটহাট কর্মবিরতি না-করেন। অনেক সময়েই তাঁর সেই আর্জি উড়িয়ে দিয়েছে বার কাউন্সিল। এ বার তারা গরমের কারণ দেখিয়ে বুধবার থেকে তিন দিনের কর্মবিরতির আন্দোলনে নেমেছে। ওই আন্দোলন নিয়ে ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি প্রধান বিচারপতি। মঙ্গলবার তিনি আইনজীবীদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, স্কুলের বাচ্চাদের মতো তাঁরা শুধু ছুটি চান কেন?
তাতে কাজ হয়নি। কর্মবিরতির ডাকে সাড়া দিয়ে অধিকাংশ আইনজীবী বুধবার কাজে আসেননি। প্রধান বিচারপতি এ দিন এজলাসেই রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেলের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আইনজীবীদের কর্মবিরতি আমার কাছে যন্ত্রণাদায়ক। একই সঙ্গে অস্বস্তিকরও।’’
হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের মঙ্গলবারের সাধারণ সভায় বেশ কিছু আইনজীবী গরমের জন্য কর্মবিরতির বিরোধিতা করেন। তাঁরা জানান, বার অ্যাসোসিয়েশন কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিলেও বুধবার অনেকেই হাইকোর্টে মামলা লড়বেন। মঙ্গলবার এ কথা বললেও বুধবার তাঁদের অনেককে হাইকোর্টে দেখা যায়নি। প্রধান বিচারপতি-সহ সব বিচারপতিই এজলাসে ছিলেন। কিন্তু মক্কেলদের হয়ে যাঁরা মামলা লড়বেন, সেই কৌঁসুলিদের দেখা নেই। অধিকাংশ আদালতেই দেখা যায়, আইনজীবীরা না-থাকায় বিচারপতিরা হয় মামলার শুনানি মুলতুবি রাখছেন অথবা শুনানির তারিখ পিছিয়ে দিচ্ছেন।
বেলা সওয়া ১২টা নাগাদ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে হাজির হন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্র, অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল লক্ষ্মী গুপ্ত এবং জিপি (গভর্নমেন্ট প্লিডার) অভ্রতোষ মজুমদার। জয়ন্তবাবু প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করেন, দু’পক্ষের আইনজীবী হাজির না-থাকলে ডিভিশন বেঞ্চ যেন বিরূপ কোনও নির্দেশ বা রায় না-দেয়।
এজি-র অনুরোধ শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘বিচারপ্রার্থীরা অসুবিধায় পড়েন, এমন কোনও নির্দেশ দেবে না বেঞ্চ। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়ায় দেরি হলে তার দায় কার?’’
কয়েক জন সরকারি আইনজীবী আদালতে হাজির ছিলেন। প্রধান বিচারপতি তাঁদের কাছে জানতে চান, অন্য কৌঁসুলিরা কোথায়? সরকারি কৌঁসুলিদের কেউ কেউ জানান, অনেকেই আসেননি। আবার বার অ্যাসোসিয়েশন বন্ধ থাকায় গাউনের অভাবে (গাউন থাকে বিভিন্ন বার অ্যাসোসিয়েশনের অফিসে) অনেকে মামলা লড়তে পারছেন না। প্রধান বিচারপতি জানান, গরমে গাউন পরতে না-চাইলে সাধারণ পোশাকেই কৌঁসুলিরা সওয়াল-জবাব চালাতে পারেন। তা ছাড়া সব বারই তো বন্ধ নেই। পরে অবশ্য বেশির ভাগ বার অ্যাসোসিয়েশনই খুলে যায়।
এ দিনই বিচারপতি অসীম রায়ের আদালতে মদন তামাং হত্যা মামলায় অভিযুক্ত বিমল গুরুঙ্গ, আশা গুরুঙ্গ, রোশন গিরি ও বিনয় তামাঙ্গের আগাম জামিনের আবেদনের শোনার কথা ছিল। কিন্তু সিবিআই এবং বিমলদের আইনজীবীরা হাজির না-থাকায় বিচারপতি রায় এ দিনের জন্য মামলাটি মুলতুবি করে দেন।
গরমের কারণে রাজ্যের বিভিন্ন নিম্ন আদালতেও আইনজীবীদের কর্মবিরতি চলছে। সেই প্রসঙ্গে রাজ্য বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অসিতবরণ বসু জানান, এখন নিম্ন আদালতগুলিতে গরমের ছুটি নেই। অথচ কয়েক বছর আগে সেখানেও গরমে ছুটি দেওয়া হত। গরমের ছুটি ফের চালু করার ব্যাপারে তাদের মত কী, চিঠি পাঠিয়ে রাজ্যের ১১৭টি বার অ্যাসোসিয়েশনের কাছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে তারা মত জানাবে। ‘‘তাদের মতামত আমরা কলকাতা হাইকোর্টে জানিয়ে দেব,’’ বলেছেন অসিতবাবু।
একে প্রচণ্ড গরম। তার উপরে দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও আদালত ভবন তৈরি না-হওয়ায় বুধবার থেকে তিন দিনের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন হাওড়া আদালতের আইনজীবীরাও। সেখানকার তিনটি বার অ্যাসোসিয়েশন তাতে সামিল হওয়ায় এ দিন সেখানে কাজ হয়নি। আইনজীবীরা জানান, সোমবার থেকে তাঁরা ফের কাজে যোগ দেবেন।