মানিক তালুকদার। —নিজস্ব চিত্র।
ভিটেয় ফিরে সংসার চালানোর মতো কাজ পাননি। তাই উত্তরাখণ্ডের সেই পাহাড়ে ফিরে যাবেন মানিক তালুকদার, যেখানে ধস নেমে সুড়ঙ্গে আটকেছিলেন দীর্ঘদিন। সেখানে একই সংস্থায়, একই কাজে যোগ দিতে চান তিনি।
সুড়ঙ্গে যখন ধসে বন্দি ছিলেন মানিক, বাড়ির লোক বার বার বলতেন, মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরলে, তাঁকে আর ফেরত যেতে দেবেন না। এলাকায় কাজ পেলে, কে যেতে চায় ভিন্ রাজ্যে! কোচবিহার জেলার বলরামপুরের পরিযায়ী শ্রমিক মানিকের বাড়িতে এখন ফের মনখারাপের সুর। মানিকের খেদ, “এখানে কোথাও একটা কাজ পেলাম না! অনেকেই আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু কেউ কোনও কাজ দিতে পারেননি। তাই আবার ফিরে যাচ্ছি উত্তরাখণ্ডে। পুরনো কাজেই যোগ দিতে।” মানিকের ছেলে মণির গলায় ক্ষোভ, “অন্য রাজ্যের যাঁরা সুড়ঙ্গ-বন্দি হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেছেন, তাঁদের কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এককালীন অনেক সুবিধাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের পাশে কেউ দাঁড়াননি।” তাঁর কথায়, “ভেবেছিলাম, বাবাকে আর ওই কাজে যেতে দেব না! কিন্তু উপায় কী!”
যা শুনে, পরিযায়ী শ্রমিক উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সামিরুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। বেশ কিছু কাজ এই মুহূর্তে রয়েছে, তাতে যদি মানিক তালুকদার আগ্রহী হন, তা হলে সেই ব্যবস্থা করা হবে। সেই সঙ্গে বিনা সুদে পাঁচ লক্ষ টাকা ঋণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।”
গত ১২ নভেম্বর উত্তরাখণ্ডে নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গে ধস নামায় আটকে পড়েছিলেন ৪১ জন শ্রমিক। সতেরো দিন পরে সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধার পাওয়া ওই শ্রমিকদের অন্যতম তুফানগঞ্জের বলরামপুর গ্রামের মানিক। যিনি বাড়িতে ফেরার আগে ও পরে তাঁর বাড়িতে ঢল নেমেছিল শাসক ও বিরোধী শিবিরের নেতাদের। অনেকেই মানিককে আশ্বাস দেন, কাজের ব্যবস্থা করে দেবেন। তবে এক মাস কেটে গেলেও, কোনও কাজ পাননি মানিক। অভিযোগ, পাননি কোনও সহযোগিতাও। তিনি জানান, ২২ জানুয়ারি উত্তরাখণ্ডে ফিরে পুরনো কাজে যোগ দেবেন। সুড়ঙ্গ নির্মাণকারী ওই সংস্থায় ইলেক্ট্রিশিয়ান পদে ২০০৭ সাল থেকে কাজ করছেন মানিক। ফের কাজে যোগ দেওয়ার বিষয়ে ওই সংস্থার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়ে গিয়েছে। তার পরেই তিনি ফেরার ব্যাপারে মনস্থির করেন। তবে ট্রেনে সংরক্ষিত আসন পাননি। তাই অপেক্ষা করছেন, তৎকালে টিকিট কাটার জন্য।