জালিয়াত চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে ৭৫ হাজার টাকা খোয়ালেন উত্তরপাড়ার সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ
একটা এসএমএস এসেছিল মোবাইল ফোনে। এড়িয়ে যেতেই পারতেন। কিন্তু মেসেজ পাঠানো নম্বরে ফোন করে নিজের সর্বনাশ ডেকে এনেছেন উত্তরপাড়ার বাসিন্দা সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।
সদ্যই করোনা সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থ হয়েছিলেন। চিকিৎসায় অনেকা টাকা খরচ হয়। কিছু টাকা ফিরে পান বিমার দৌলতে। সেই টাকাই ছিল ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে কিছু নেই। প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছেন প্রবীণ সোমনাথ। মঙ্গলবারই উত্তরপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। রাজ্য পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়। তবে টাকা ফিরে পাওয়া যাবে কি না তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি এক নতুন পদ্ধতিতে ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকা লোপাটের জালিয়াত চক্র সক্রিয় হয়েছে। সেই রকমই এক চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছেন সোমনাথ। মঙ্গলবার সকালে তাঁর কাছে একটি মেসেজ আসে। তাতে লেখা, ফোনের সিম আপডেট করতে হবে। ওই নম্বরে পাল্টা ফোন করেন সোমনাথ। সেই সময়েই অপর প্রান্তের ব্যক্তি নিজেকে সংশ্লিষ্ট টেলিকম কাস্টমার কেয়ার ডেস্কের প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে বলেন, আপনি এখনই অনলাইনে ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে কিছু টাকার রিচার্জ করুন। এ জন্য একটি অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলা হয়। জালিয়াত চক্রের প্রতিনিধির কথা মতো সরল বিশ্বাসে সব নির্দেশ পালন করেন সোমনাথ। এর পরেই তিনি ভুল বুঝতে পারেন। কিন্তু ততক্ষণে এক মিনিট পার। সোমনাথ দেখেন তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ২৫ হাজার টাকা লোপাট। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি সব বুঝে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টটি ব্লক করেন। কিন্তু তাতে আরও মিনিট দুয়েক সময় লাগে। কিন্তু তার মধ্যেই আরও দু’বার ২৫ হাজার টাকা করে তোলা হয়। মিনিট তিনেকের মধ্যে সোমনাথের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ৭৫ হাজার টাকা উধাও।
সোমনাথ জানিয়েছেন জালিয়াত চক্রের প্রতিনিধির নির্দেশ মতো তিনি গুগল প্লে স্টোরে ‘কেওয়াইসি কিউএস অ্যাপ’ (kyc qs app) টাইপ করে একটি অ্যাপ ডাউনলোড করেন। এর পরে ফোনে রিচার্জ করেন। আনন্দবাজার অনলাইন গুগল প্লে স্টোরে ‘কেওয়াইসি কিউএস অ্যাপ’ টাইপ করে দেখেছে তাতে ‘টিম ভিউয়ার কুইক সাপোর্ট’ নামে একটি অ্যাপ খুলছে। এই অ্যাপ কোনও ফোনে থাকা খুবই বিপজ্জনক। এর ফলে কোনও লেনদেন করলে তাতে ব্যবহার করা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের নম্বর থেকে পাসওয়ার্ড বা ওটিপি সবই জালিয়াত চক্র অন্য ফোন থেকে দেখতে পায়। সেই পদ্ধতিতেই সোমনাথের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে সব টাকা লোপাট হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশও।
প্রসঙ্গত, ইদানীং ফোনের সিম থেকে এটিএম কার্ড আপডেটের জন্য ফোন বা এসএমএস আসছে অনেকেরই কাছে। কোনও কোনও সময়ে আকর্ষণীয় উপহারের প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা লোপাট যাওয়ার অভিযোগও অনেক। সম্প্রতি বিভিন্ন ব্যাঙ্কের পক্ষে এ নিয়ে গ্রাহকদের সতর্কও করা শুরু হয়েছে। স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) আগেই টুইট করে সতর্ক করেছিল গ্রাহকদের। এ বার সব গ্রাহকের ফোনেই মেসেজ পাঠানো শুরু হয়েছে। বলা হয়েছে, কোনও অচেনা ব্যক্তির কথায় বা পরামর্শে কিছু অ্যাপ ডাউনলোড করলেই বিপদের ঝুঁকি। এই ভাবে হ্যাকাররা গ্রাহকদের লেনদেন সংক্রান্ত গোপন তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে।