জুজু এনআরসি-র, ঘরে ফেরা ৩৬ বছর পরে

ফিরলেন এনআরসি ‘জুজু’-র জন্য। ফিরলেন পৈতৃক ভিটে পৈতৃকই আছে কিনা, দেখতে। দেখলেন, সব ঠিকই আছে।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

মুরারই শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৯ ০৪:০৬
Share:

দাদা-দিদিদের সঙ্গে বসে বাড়ির দলিল দেখছেন শুক্তার আলি। সোমবার ঘুসকিরা গ্রামে। ছবি: তন্ময় দত্ত

মাঝে কেটেছে সাড়ে তিন দশক। এত বছর নিখোঁজ থাকার পরে হঠাৎ বাড়ি ফিরলেন শুক্তার আলি।

Advertisement

ফিরলেন এনআরসি ‘জুজু’-র জন্য। ফিরলেন পৈতৃক ভিটে পৈতৃকই আছে কিনা, দেখতে। দেখলেন, সব ঠিকই আছে। ৩৬ বছর আগে বীরভূমের মুরারই ১ ব্লকের ঘুসকিরা গ্রাম ছেড়েছিলেন শুক্তার। রবিবার বিকেলে সেই হারিয়ে যাওয়া ছোট ভাইয়ের দেখা পেয়ে আত্মহারা মুক্তার আলি। খবর পেয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে এলেন ছয় বোনও। বাড়িতে উৎসবের মেজাজ। দাদা মুক্তার ও দিদি জুমেলা বিবি, জাকিরা বিবি, কুবেরা বিবি, নবেরা বিবির কথায়, ‘‘ভাই বেঁচে আছে না মারা গিয়েছে, বুঝতে পারতাম না। ও ফিরে আসায় কী যে আনন্দ হচ্ছে ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’’

রবিবার বিকেল তখন তিনটে। দরজায় টোকা শুনে খুলে অবাক মুক্তারের স্ত্রী মানোয়ারা বিবি। দেখেন, তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি ও বছর কুড়ির এক তরুণ। কিছু বলার আগেই মনোয়ারাকে প্রশ্ন করেন ওই ব্যক্তি— ‘‘ভাবি, দাদা বাড়িতে আছে?’’ বাড়িতে ছিলেন না মুক্তার। ‘ভাবি’ ডাক শুনে আর প্রয়াত শ্বশুর ও স্বামীর সঙ্গে মুখের মিল দেখে মানোয়ার বলে বসেন, ‘‘আপনি কি শুক্তার?’’ উত্তর মেলে, ‘‘হ্যাঁ। আর এ আমার ছেলে নৌশাদ।’’

Advertisement

সোমবার শুক্তার জানান, সাত বোন আর দুই ভাইয়ের অভাবের সংসার ছিল। বাবা হাসমত আলি মারা যাওয়ার পরে সামান্য জমির উপরে ভরসা করে কোনও ক্রমে চলছিল। পরিবারের হাল ফেরানোর স্বপ্নেই বছর বারোর কিশোর শুক্তারের ঘর ছাড়া। তাঁর কথায়, ‘‘ভেবেছিলাম কিছু একটা কাজ জুটিয়ে যদি পরিবারের কষ্ট লাঘব করা যায়। তার পর কোথায়, কী ভাবে হারিয়ে গেলাম!’’ তিনি জানান, বছর একুশ আগে দুর্গাপুরে এসে বিয়ে করেন রাজিয়া খাতুনকে। এক ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে পাকাপাকি ভাবে তার পর থেকে দুর্গাপুরেই বসবাস। এখন করেন ঠিকাদারি।

তা হলে হঠাৎ ‘ঘরে ফেরা’ কেন?

শুক্তার জানালেন, এ রাজ্যেও এনআরসি কার্যকর হলে তাঁদের পরিবার যাতে নাগরিক পঞ্জি থেকে বাদ না চলে যায়, তাঁকে সে কথা বুঝিয়ে পৈতৃক দলিলের খোঁজে মুরারই আসতে রাজি করিয়েছিলেন নৌশাদ। বছর কুড়ির ওই যুবক বলছেন ‘‘বাবাকে বলি, তোমার পৈতৃক দলিল না-পেলে দেশের নাগরিকই থাকতে পারব না!’’ রবিবার সকালে দুর্গাপুরের বেনাচিতির কাছে নঈমনগর থেকে আবছা স্মৃতি সম্বল করে মুরারইয়ে রওনা দেন বাপ-বেটা।

যে কারণে শুক্তার বাড়ি ফিরেছেন, তা-ও সফল। মুক্তার বলছেন, ‘‘বাবার জমি আমার আর ভাইয়ের নামেই রয়েছে। ভাইকে তা দেখালাম।’’ বছর আটচল্লিশের শুক্তার বললেন, ‘‘ঘরের মতো আর কি কিছু হয়! আর যোগাযোগ ছিন্ন হবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement