Cyclone Yaas

ত্রাণ নিয়ে বঞ্চনা বরদাস্ত নয়, হুঁশিয়ারি মমতার

হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি-১ ও ২, মিনাখাঁ এবং হাসনাবাদ ব্লকের প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। তারপরে হিঙ্গলগঞ্জ কলেজে প্রশাসনিক বৈঠক করে ওই হুঁশিয়ারি দেন।

Advertisement

   নির্মল বসু  , দিলীপ নস্কর

সাগর, হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২১ ০৫:৫৮
Share:

ফাইল চিত্র।

ত্রাণ নিয়ে কোনও রকম বঞ্চনা তিনি বরদাস্ত করবেন না বলে কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জোর দিলেন 'দুয়ারে ত্রাণ' কর্মসূচির উপরেও।

Advertisement

যে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরে ত্রাণ নিয়ে অভিযোগ ওঠে। গত বছর আমপানের পরেও এই ধরনের অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় হয় রাজ্য। এ বার ইয়াসের পরেও দুই ২৪ পরগনার প্লাবিত এলাকা থেকে জল এবং শুকনো খাবারের অপ্রতুলতা নিয়ে অভিযোগ ওঠা শুরু হয়েছে।

শুক্রবার দুই ২৪ পরগনার বিপর্যস্ত এলাকা হেলিকপ্টারে পরিদর্শন করেন মমতা। প্রথমে সুন্দরবন লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি-১ ও ২, মিনাখাঁ এবং হাসনাবাদ ব্লকের প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। তারপরে হিঙ্গলগঞ্জ কলেজে প্রশাসনিক বৈঠক করে ওই হুঁশিয়ারি দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘'আসতে আসতে অনেক এলাকা দেখেছি। ইটভাটা থেকে শুরু করে কৃষিজমি, বাড়িঘর বিদ্যাধরী নদীর জলে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। যাতে দুর্গত সব এলাকার মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছয় তা নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনকে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণে এক হাজার কোটি

Advertisement

টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কোনও দুর্গত মানুষ যেন ত্রাণ থেকে বঞ্চিত না হন। ত্রাণ বিলি নিয়ে কোনও রকম গাফিলতি হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

বৈঠকে মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বসিরহাটের সাংসদ নুসরত জাহান-সহ জেলা ও মহকুমা প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে আলাদা আলাদা ঘরে বসার ব্যবস্থা হয়। মুখ্যমন্ত্রী ভিডিয়ো কনফারেন্স করেন। ইয়াসের পাশাপাশি পূর্ণিমার ভরা কটালের নোনা জলে ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যানও দেন মুখ্যমন্ত্রী।

এই মুহূর্তে মানুষকে রক্ষা করা, তাঁদের উদ্ধার করা এবং ত্রাণ দেওয়া বড় কাজ। সে কথা স্মরণ করিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দেখতে হবে ত্রাণ শিবিরে যাঁরা আছেন, তাঁদের যেন কোনও সমস্যা না হয়। তাঁরা খাবার না পেলে পুলিশ কিন্তু বিডিওদের বলবে। আমি দেখতে চাই না, কারও কোনও খাবারে সমস্যা হয়েছে বা ত্রাণ নিয়ে কোনও বঞ্চনা হয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, ওষুধ এবং ত্রাণ দিতে হবে। বিশেষ করে নজর দিতে হবে শিশুখাদ্য এবং প্রসূতি মায়েদের দিকে। জল যতক্ষণ না পুরোপুরি সরছে, ততক্ষণ পানীয় জলের পাউচ, মাস্ক, খাবার পৌঁছে দিতে হবে।’’

ত্রাণের এই সব কাজে বসিরহাট, বারাসত, বনগাঁ এবং ব্যারাকপুর— উত্তর ২৪ পরগনার এই চার মহকুমার জন্য চার জন নোডাল অফিসার পুরো নজরদারি চালাবেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আগামী ৩ জুন থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত গ্রামে-গ্রামে, ব্লকে-ব্লকে ‘দুয়ারে ত্রাণ’ কর্মসূচির শিবির চলবে। ১৯ জুন থেকে ৩০ জুন ক্ষতিগ্রস্তেরা ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে পারবেন। সেই আবেদন খতিয়ে দেখে ১ জুলাই থেকে ৮ জুলাইয়ের মধ্যে দুর্গতদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা ঢুকে যাবে।’’

বিপর্যয়ে রাস্তারও ক্ষতি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘পথশ্রী’ প্রকল্পে গ্রামীণ রাস্তা তিন বছরের ‘গ্যারান্টি’ থাকে। যারা রাস্তা করেছে তাদের রাস্তা করে দেওয়ার জন্য বলতে হবে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রশাসনিক বৈঠকটি হয় গঙ্গাসাগরে। হেডিপ্যাডের পাশে মঞ্চ বাঁধা হয়েছিল। শুরুতে জেলাশাসক পি উলগানাথন জানান, এই এলাকায় প্রচুর বাঁধ ভেঙেছে। ত্রাণ শিবিরগুলিতে খাবার দেওয়া হচ্ছে। জমা জল বের করতে নিকাশি ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রচুর কৃষিজমি ও ম্যানগ্রোভ নষ্ট হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘জলে যাঁরা আটকে পড়ে রয়েছেন, তাঁদের খাবার, জামাকাপড়, ত্রিপল ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ‘দুয়ারে ত্রাণ’ সব স্তরের মানুষ যেন পায়। আমপানের মতো অভিযোগ না ওঠে। আরও ম্যানগ্রোভ লাগাতে হবে। উদ্ধার কাজ ভাল করে করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিজীবী, মৎস্যজীবী, পানচাষিদের ক্ষতির পরিমাণ আবেদনের পর তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ স্থানীয় বিধায়ক তথা সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা জানান, নলকূপ ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা দরকার। কপিলমুনির মন্দিরের সামনে সমুদ্রবাঁধের ভাঙন হচ্ছে। মিনিট পনেরোর বৈঠকে এখানেও হাজির ছিলেন মুখ্যসচিব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement